ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টস জিতে আগে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেন মহেন্দ্র সিং ধোনি। ক্যাপ্টেনের সিদ্ধান্ত যে ভুল ছিল না সেটা খুব দ্রুতই বুঝে গেল ভারতীয় সমর্থকরা। কারণ, ক্রিজে দাঁড়িয়ে ওপেনার শেবাগ যেভাবে ব্যাট চালালেন তাতে আত্মতুষ্টিতেই ভুগেছে ভারতীয় শিবির। লিটল মাস্টার খ্যাত শচীনকে সঙ্গে নিয়ে ইংলিশ বোলারদের ওপর রীতিমতো তাণ্ডব চালাল এই বিগ হিটার। দু’দিন অনুশীলনের সময় বাঁ পায়ের মাসলে হাল্কা আঘাত পেলেও তার কোনো প্রভাবই দেখা যায়নি ম্যাচে। বরং স্বভাবসুলভ খেলাই খেলেছেন শেবাগ। দুই পেসার এন্ডারসন ও শেহজাদাকে নিয়ে মেতে ওঠেন ছেলেখেলায়। ইন সুইং কিংবা আউট সুইং কোনো বলেই থামানো যাচ্ছিল না তাকে। অবশ্য শেবাগের ঠিক বিপরীত চরিত্র রূপায়ণ করেছেন শচীন। তিনি খেলেছেন একেবারেই ঠাণ্ডামাথায়। শচীনের স্কোর লাইনটা দেখলেই বিষয়টা পরিষ্কার হয়ে যাবে। শেবাগ যখন ব্রেসনানের বলে উইকেটের পেছনে দাঁড়ানো ম্যাচ প্রিয়রের তালুবন্দি হয়ে সাজঘরের পথ ধরেন তখন শচীনের রান মাত্র ১০। এই রান তুলতে তিনি খরচ করেছেন ২১ বল। বীরেন্দ্র শেবাগ মাত্র ২৬ বলে অর্ধডজন চার দিয়ে নিজের ইনিংস সাজান। শেবাগের বিদায়ের পর গৌতম গাম্ভিরকে সঙ্গে নিয়ে রানের চাকা সচল করেন শচীন। তবে এবার তিনি স্ব-মূর্তিতে ফেরেন। প্রতিপক্ষের বোলারদের নির্মমভাবে শাসন করতে শুরু করেন। ঠাণ্ডমাথার সেই শচীনকে এবার অগ্নিমূর্তিতে দেখেন ইংলিশ বোলাররা। সুপারসনিক গতিতে রান এগিয়ে নিয়ে যেতে থাকেন এই ওপেনার। শচীনের সঙ্গে জুটি গড়ে গাম্ভির দলের স্কোরে ১৩৪ রান জমা করে ব্যক্তিগত ৫১ রান তুলে নিয়ে সাজঘরে ফিরে যান। তিনি ৬১ বলে পাঁচ বাউন্ডারি দিয়ে নিজের ইনিংস সাজান। গাম্ভির ফিরে গেলেও শচীনকে আটকাতে পারেনি ইংলিশ বোলাররা। এরপর শচীন টেন্ডুলকার যুবরাজকে সঙ্গে নিয়ে নিজের অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছে যান। তুলে নেন ক্যারিয়ারের ৪৭তম সেঞ্চুরি। তিনি ১০৩ বলের খরচায় ৮ বাউন্ডারি এবং চারটি ওভার বাউন্ডারি দিয়ে নিজের শতরান পূর্ণ করেন। সেঞ্চুরির সঙ্গে আরও ২০ রান জমা করে এই লিটল মাস্টার এন্ডারসনের বলে ইয়ার্ডের ক্যাচে পরিণত হয়ে সাজঘরে ফিরে যান। দশটি চার ও পাঁচটি ছয় দিয়ে ১১৫ বলে নিজের ইনিংসের ফুলঝুরি সাজান শচীন টেন্ডুলকার। চেন্নাস্বামী স্টেডিয়ামে শচীন ও গাম্ভিরের পর জ্বলে ওঠে যুবরাজের ব্যাটও। মিডল অর্ডারের এই ব্যাটসম্যান খেলেছেন ৫৮ রানের দুর্দান্ত এক ইনিংস। তবে ভারতের মিডল অর্ডারের আর কোনো ব্যাটসম্যান তেমন সফল না হওয়ায় ভারতের ইনিংস থামে ৩৩৮ রানে। সব উইকেট হারিয়ে ৪৯.৫ বলে এই রান সংগ্রহ করে তারা। এদিন ভারতের বিপক্ষে বল হাতে সফলতা পেয়েছেন ইংলিশ অল রাউন্ডার টিম ব্রেসনান। তিনি পুরো দশ ওভার বল করে ৪৮ রানের বিপরীতে পেয়েছেন ৫ উইকেট।
জয়ের জন্য ৩৩৯ রানের লক্ষ্যে মাঠে নেমে ইংল্যান্ডও আক্রমণাত্মক হয়ে খেলতে থাকে। দুই ওপেনার অধিনায়ক এন্ড্রু স্ট্রস ও কেভিন পিটারসেন জহির খান-মুনাফ প্যাটেলদের বল নির্দয়ভাবে খেলতে শুরু করেন। তাদের ব্যাটিং তাণ্ডবে লাইন হারিয়ে ফেলে বিশ্বসেরা এই পেসারদের বল। তবে ৬৮ রানে পিটারসেনকে মুনাফ প্যাটেল নিজের বলে নিজেই তালুবন্দি করে ভারতীয় শিবিরে কিছুটা স্বস্তি ফিরিয়ে আনেন। ৪৩ রান পর স্পিনার পিযূষ চাওলা ওয়ান ডাউনে মাঠে নামা ট্রটকে প্যাভিলিয়নের পথ ধরালেও স্ট্রস এবং ইয়ান বেল হতাশ করেন ভারতীয়দের। এই জুটি আবারও স্বাগতিক বোলারদের ওপর চড়াও হয়ে খেলতে শুরু করেন। এই জুটি ক্ষিপ্রতার সঙ্গে খেলে সব সময়ই দলের রান রেট ৬-এর ওপরে রাখেন। ইংলিশ দলনায়ক স্ট্রস ক্যারিয়ারের পঞ্চম সেঞ্চুরির দেখা পান মাত্র ৯৯ বলে। ১৩টি চারের মারে নিজের সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন এই ওপেনার। আর ইয়ান বেল নিজের হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন ৪৫ বলের খরচায়। এই জুটি ১৭০ রান করার পর পেসার জহির খান ভয়ঙ্কররূপ ধারণ করে ফিরে আসেন ইংলিশদের সামনে। যেখানে প্রথম স্পেলে ৭ ওভার বল করে জহির খান ৫৩ রান দিয়ে এক উইকেটের দেখাও পাননি। সেখানে নিজের অষ্টম ওভার করতে এসে অধিনায়কের আস্থার জবাব দেন এই পেসার। ওভারের চতুর্থ ও পঞ্চম বলে তুলে নেন ইয়ান বেল (৬৯) ও ওপেনার এন্ডু্র স্ট্রসের (১৫৮) উইকেট। নবম ওভারে আবাও জ্বলে ওঠেন জহির খান। এবার তার শিকার পল কলিং উড। পর পর দুই ওভারে তিন মারকুটে ব্যাটসম্যানকে প্যাভিলিয়নে ফিরিয়ে দিয়ে নিশ্চিত হারের মুখ থেকে দলকে ফিরিয়ে আনেন জহির খান। কিন্তু ম্যাচ জমে ওঠে ইনিংসের ৪৯তম ওভারে। শেষ দুই ওভারে ইংলিশদের প্রয়োজন ছিল ৩০ রান। বল হাতে আসনে স্পিনার পিযূষ চাওলা। তার প্রথম বলে কোনো রান নিতে না পারলেও পরের বলেই ওভার বাউন্ডারি হাঁকান। তৃতীয় বলে নেন এক রান। চতুর্থ বলে ব্রেসনান দুই রান জমা করেন স্কোরে। পঞ্চম বলে ব্রেসনান আরও একটি ছক্কা হাঁকালে ম্যাচ আবারও মোড় নেয় ইংল্যান্ডের দিকে। তবে পিযূষ নিজের শেষ বলে ব্রেসনানকে ফিরিয়ে দিলে হতাশা দেখা দেয় ইংলিশ শিবিরে। শেষ ওভারে এন্ড্রু স্ট্রস বাহিনীর জয়ের জন্য দরকার ছিল ১৪ রান। এবার মহেন্দ্র সিং ধোনি বল তুলে দেন মুনাফ প্যাটেলের হাতে। প্রথম দুই বলে সন ৩ রান তুলে নিলেও তৃতীয় বলে শাহজাদ প্যাটেলের বল পাঠিয়ে দেন গ্যালারিতে। ওভারের শেষ ৩ বলে ইংল্যান্ডের জয়ের জন্য প্রয়োজন ছিল মাত্র ৫ রান। শ্বাসরুদ্ধকর এমন ম্যাচে শেষ ওভারে গ্যালারিতে নেমে আসে পিনপতন নীরবতা। ব্যাটসম্যান সন ও শেহজাদ দলকে জয় এনে দিতে না পারলেও ভারতের সমান রান তুলে ভারতের জয়ের পথ রুদ্ধ করে দিয়ে পয়েন্ট ভাগ করে মাঠ ছাড়েন। এমন ম্যাচ বহু দিন দেখেনি ক্রিকেট বিশ্ব। তবে ভারতের কাছে এমন হতাশাজনক পারফরমেন্সও আশা করেননি ক্রিকেটবোদ্ধারা।
No comments:
Post a Comment