একজন সাবেক বিশ্বসুন্দরী। অন্যজন অস্কারজয়ী অভিনেত্রী। একজন এশিয়া কাঁপিয়ে পশ্চিমা দেশগুলোতে খ্যাতি কুড়িয়েছেন। অন্যজন মাত্র একটি ছবি টাইটানিক-এর মাধ্যমে ইতিহাস গড়েছেন। বলা হচ্ছে ঐশ্বরিয়া রাই বচ্চন ও কেট উইন্সলেটের কথা। এ দুই সুন্দরীর সৌন্দর্য কিংবা মেধার তুলনায় যাওয়াটা অবান্তর। অ্যাশ অভিনয়ের প্রশিক্ষণ ছাড়াই ‘বিশ্বসুন্দরী’র তকমা গায়ে ঝুলিয়ে অভিনয়ের ময়দানে নেমে পড়েছিলেন। অন্যদিকে কেট ১১ বছর বয়স থেকে অভিনয়ের স্কুলে মন দিয়ে পড়াশোনা করেছেন। টাইটানিক-এর রোজের সঙ্গে দেবদাস-এর পারু কিংবা রিডার-এর হ্যানার সঙ্গে চোখের বালির বিনোদিনীকে এক পাল্লায় ফেলে দেওয়াটা অর্থহীন। তার পরও এ দুই ভিন্ন মেরুর বাসিন্দাকে আজ এক সমীকরণে শামিল করতে হচ্ছে। কারণটা এত দিনে সবাই জেনে গেছেন, এই প্রথম অ্যাশ-কেট একসঙ্গে একই ফ্রেমে বন্দী হয়েছেন। গত ২২ জুলাই দুজনই রোমে সুইস ঘড়ি লংগিন্সের বিজ্ঞাপনচিত্রে কাজ করেছেন। ঐশ্বরিয়া চার বছর ধরেই লংগিন্সের মুখপাত্র হিসেবে কাজ করছেন। তবে কেট এবারই প্রথম লংগিন্সের সঙ্গে যুক্ত হলেন। শুটিংয়ের আগেই অ্যাশ-কেটের পরিচয়ের পর্বটা হয়ে গিয়েছিল। বিভিন্ন চলচ্চিত্র উৎসব, উদ্বোধনী প্রদর্শনীতে ‘হাই-হ্যালোর’ সম্পর্ক ছিল দুজনার। তবে এবার জানাশোনার পর্বটাও সেরে ফেললেন এ দুই সুন্দরী। কেট অবশ্য জুলিয়া রবার্টসের মতো বলেননি, তাঁর দেখা বিশ্বের সেরা সুন্দরী অ্যাশ। তবে তিনি নিজের চেয়ে শত কোটি গুণ বেশি সুন্দরী মনে করেন অ্যাশকে। ঐশ্বরিয়ার ভাষায়, ‘কেটের সঙ্গে কাজের প্রস্তাবটি হাতছাড়া করতে চাইনি। একটা সময় ভেবেই নিয়েছিলাম, কাজটি বোধ হয় হচ্ছে না। তবে শেষ পর্যন্ত সবকিছু ভালোমতোই শেষ হলো।’
কেট এলিজাবেথ উইন্সলেটের তুলনায় ৩৭ ছুঁই ছুঁই ঐশ্বরিয়া কৃষ্ণরাজ রাই এক বছরের বড়। দুজনই ক্যারিয়ারের শুরুতে নিজেদের নাম সংক্ষিপ্ত করেছেন। এমনকি তাঁদের ডাকনামও বেশ উদ্ভট। ঐশ্বরিয়ার নাম ‘গুল্লু’ আর কেটের নাম ‘কর্সেট’। পাঁচ ফুট সাত ইঞ্চির ঐশ্বরিয়া উচ্চতায়ও কেটের তুলনায় আধা ইঞ্চি এগিয়ে। বিজ্ঞাপনচিত্রের শুটিংয়ের ফাঁকে এ রকম আরও কিছু মজার মিল আবিষ্কার করেন দুজন। যেমন—ঐশ্বরিয়া বলিউডে প্রবেশ করেন ১৯৯৭ সালে। কেটের প্রথম বড় হিট ছবি টাইটানিকও মুক্তি পায় একই বছর। কেটের অভিনয়ের শুরুটাও ঐশ্বরিয়ার মতো ফ্লপ ছবি দিয়ে (হ্যাভেন ক্রিয়েচার্স)। যদিও ঐশ্বরিয়ার মতো প্রথম ছবিতেই সমালোচকদের প্রশংসা কুড়ান কেট। ১১ বছর বয়সে মডেলিং থেকে অভিনয়ের স্কুলে ভর্তি হন তিনি। ওই বয়সে অভিনেত্রী হওয়ার খায়েশ না থাকলেও ঐশ্বরিয়াও নবম শ্রেণীতে পড়ার সময় মডেলিং শুরু করেন। এরপর স্বপ্ন দেখেছিলেন টিভির অনুষ্ঠান নিয়ে। ডাবিং করতে গিয়ে আবিষ্কার করেন, কেউ তাঁর কণ্ঠের জাদুতে মাতোয়ারা হচ্ছে না। সবাই উল্টো চ্যালেঞ্জ ছুড়েছিল, এই মেয়েকে দিয়ে কিছু হবে না। হ্যাভেন ক্রিয়েচার্স মুক্তির পর কেটকে নিয়েও সমালোচকেরা বলেছিলেন, এই ছবিতে কেট এত ভালো অভিনয় করেছেন যে তাঁর পক্ষে এই চরিত্র থেকে বেরিয়ে ভবিষ্যতে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করা অসম্ভবই হবে। কেট সেই সমালোচকদের ভবিষ্যদ্বাণী মিথ্যা প্রমাণ করে ছেড়েছেন। ঐশ্বরিয়াও তাই। দুই বছর ব্যর্থতার দায়ভার মাথায় নিয়ে ১৯৯৯ সালে হাম দিল দে চুকে সনম-এর মাধ্যমে ঝলসে ওঠেন। অথচ তাল-এর শুটিংয়ে আটকে যাওয়ার কারণে জীবনের প্রথম হিট ছবির উদ্বোধনী প্রদর্শনীতে হাজির থাকতে পারেননি অ্যাশ। কেটের অবস্থাও ঠিক তাই। টাইটানিক-এর উদ্বোধনী প্রদর্শনীর দিন কেট ছিলেন সাবেক প্রেমিক স্টিফেন ট্রিড্রের শেষকৃত্য অনুষ্ঠানে।
কেটের ঝুলিতে আছে একটি অস্কারসহ ছয়বার অস্কার মনোনয়ন। তুলনায় ঐশ্বরিয়ার ছবি জিনস, দেবদাস অস্কারের দরজা পর্যন্ত গেছে। তবে ঐশ্বরিয়া লন্ডনের মাদাম তুসোর মোমের জাদুঘরে একমাত্র ভারতীয় অভিনেত্রী হিসেবে দাঁড়িয়ে আছেন। কেটের ভাগ্যে এখনো ওই অর্জন জোটেনি। কেট পড়াশোনায় খুব বেশি এগোতে না পারলেও অ্যাশ উচ্চমাধ্যমিকে বিজ্ঞান বিভাগে পুরো ভারতে দ্বিতীয় হয়েছিলেন। তিন বছর স্থাপত্যবিদ্যায় পড়াশোনাও করেছিলেন। কান চলচ্চিত্র উৎসবে বিচারক (২০০৩) থেকে একমাত্র নারী মডেল হিসেবে কোকাকোলা, পেপসি দুটোরই মুখপাত্র হয়েছিলেন। বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় টিভি শো ‘অপরাহ্ উইনফ্রে’ শোতে দুবার অংশগ্রহণ থেকে রাষ্ট্রীয় পদক পদ্মশ্রীর মতো অর্জন রয়েছে অ্যাশের। নেদারল্যান্ডে ‘ঐশ্বরিয়া’ নামের একটি টিউলিপ ফুলেরও নামকরণ করা হয়েছে। টাইম ম্যাগাজিনের প্রচ্ছদে একাধিকবার আসা, একই ম্যাগাজিনের দৃষ্টিতে বিশ্বের সেরা ১০০ ব্যক্তিত্বের একজন হওয়া—ঐশ্বরিয়ার অর্জন। কেটও ১৯৯৬ সালে পিপল ম্যাগাজিনের দৃষ্টিতে বিশ্বের ৫০ জন সুন্দরীর মধ্যে দশম হয়েছিলেন।
এত সব অর্জনের ভারে গয়নাগাটির ওজন বহন করতে চান না দুজনের কেউই। আড্ডার ফাঁকে ঐশ্বরিয়া আবিষ্কার করেন, শুটিংয়ের জন্য গয়না ব্যবহার করলেও ব্যক্তিজীবনে কেট ও তিনি, কেউই গয়নাগাটি পছন্দ করেন না। বরং ঘড়ি জমাতে দুজনই ভালোবাসেন। সামাজিক যোগাযোগের ওয়েবসাইটে বারাক ওবামা থেকে বিশ্বের তাবৎ তারকা হুমড়ি খেয়ে পড়লেও কেট কিংবা অ্যাশ, কেউই এখনো আগ্রহী হয়ে উঠতে পারেননি। হাজারো মিল-অমিলের মধ্যে একটি জায়গায় দুজনের ভীষণ মিল আর সেটা আবিষ্কার করেন তাঁদের পরিচালক জেন হেজ। তিনি বলেন, ‘দুজনই মহাতারকা। সুতরাং তাঁদের তো থাকার কথা আকাশে। কিন্তু খ্যাতির ব্যাপ্তি তাঁদের ব্যক্তিত্বের দ্যুতি ম্লান করতে পারেনি। দুজনই ভীষণ বন্ধুবৎসল, মাটির কাছাকাছি থাকতে পছন্দ করেন। হয়তো এই বিনয়ই তাঁদের নিজেদের ক্ষেত্রে শ্রেষ্ঠ আসনে বসিয়েছে। তাঁদের দুজনের যুগলবন্দী সত্যিই দেখার মতো!’
রুম্মান রশীদ খান
তথ্যসূত্র: ওয়েবসাইট
No comments:
Post a Comment