CRICKET LIVE STREAMING

Thursday, September 30, 2010

ক্রিকেটার থেকে গায়ক atif aslam


হওয়ার কথা ছিল ক্রিকেটার। পাকিস্তানের অনূর্ধ্ব-১৯ দলে ফাস্ট বোলার হিসেবে জায়গাও পেয়েছিলেন। কিন্তু সেখান থেকে হুট করেই হয়ে গেলেন গায়ক। দেশের গণ্ডি পেরিয়ে ঘাঁটি গেড়েছেন বলিউডে। গায়ক আতিফ আসলাম সামনে আত্মপ্রকাশ করছেন নায়ক হিসেবে। আনন্দ পাঠকদের জন্য বিশেষ এই সাক্ষাৎকারে বলেছেন আরও অনেক না-বলা কথা

প্রায় মধ্যরাত। স্পা করে এসে পাঁচ তারকা হোটেলের বিলাসবহুল কক্ষে বসলেন আতিফ আসলাম। জানালেন, ক্লান্তি তাতে চলে গেছে অনেকটাই। বাইরে তখন ঝুম বৃষ্টি। জানালা গলে আতিফের দৃষ্টি চলে গেল সেদিকে। বোধ করি মনটাও। ‘রাস্তায় এখন জ্যাম হবে কেমন?’ আতিফের জিজ্ঞাসা। রাতের বেলা জ্যাম একটু কম হবে শুনে বললেন, ‘তাহলে চলুন, গাড়িতে ঘুরে ঘুরে বৃষ্টি দেখি আর সাক্ষাৎকার দিই।’ এর পর তিনি আমাদের নিয়ে বেরিয়ে পড়লেন ঢাকার রাস্তায়, বৃষ্টি দেখতে।
ঢাকায় এটা আতিফের চতুর্থবার আসা। শহরটা বেশ পরিচিত। ‘ঢাকার সবচেয়ে সুবিধাজনক এবং সবচেয়ে অসহনীয় ব্যাপারটি হলো যানজট।’ মন্তব্য করলেন আতিফ।
অসহনীয় বিষয়টি বোঝা গেল, কিন্তু সুবিধাজনক বিষয়টি কী? ‘ধরুন, কোনো কারণে কোথাও যেতে আপনি বেশ দেরি করে ফেলেছেন। কোনো সমস্যা নেই, সব দোষ যানজটের ঘাড়ে চাপিয়ে দিয়ে নিশ্চিন্ত হয়ে পড়ুন।’ আতিফের রসবোধের পরিচয় পাওয়া গেল। ঢাকার আর কী ভালো লাগে? ‘এখানকার মানুষের অতিথিপরায়ণতা। এ রকমটা আর কোথাও পাইনি আমি। তবে সবচেয়ে ভালো লাগে শাড়ি। বাঙালি মেয়েরা শাড়ি পরলে এত সুন্দর লাগে, সেটা ঢাকায় না এলে অজানাই থেকে যেত। ভাবছি বিয়ের আগে ঢাকা থেকে একগাদা শাড়ি নিয়ে যাব। তবে এবার ঢাকা এসে মনে হয়েছে আজকালকার বাংলাদেশি তরুণীরা এই সুন্দর পোশাকটা মনে হয় একটু কম পরে।’
চলে যাই গানের প্রসঙ্গে। বলিউডে শুরু হলো কীভাবে? ‘আমি তখন জাল ব্যান্ড থেকে বের হয়ে এসেছি। প্রথম অ্যালবাম জলপরি বাজারে এসেছে। হঠাৎ একদিন মহেশ ভাটের ফোন। ইন্টারনেটে আমার গান শুনে ফোন দিয়েছেন। বললেন, বলিউডে প্লেব্যাক করতে চাই কি না। এভাবেই ‘ও লামহে’ দিয়ে আমার শুরু। সেটা ২০০৬ সালের ঘটনা।’ ওই গানটা তো বেশ জনপ্রিয়তা পায়? ‘আমার সৌভাগ্য। কালযুগ ছবিতে ‘আদাত’ গানটিও হিট হওয়ায় বলিউডের শ্রোতারা আমাকে একটা আলাদা জায়গা দিয়ে দেন তাঁদের মনে। তার পর থেকে তো পাকিস্তান-ভারত-পাকিস্তান—এই করেই কেটে যাচ্ছে।’
২০০৬ সালেই ভারত থেকে প্রথম এবং আতিফের দ্বিতীয় অ্যালবাম দুরি বাজারে আসে। এটিও পায় দারুণ জনপ্রিয়তা। এরপর ‘তেরে বিন’, ‘পেহলি নজর মে’, ‘বেখুদা তুমহি হো’, ‘তেরা হোনে লাগাহু’, ‘তু জানেনা’, ‘তেরে লিয়ে’, ‘আভি যা সানম’ ইত্যাদি একের পর এক হিট গান উপহার দিয়ে যাচ্ছেন ভক্তদের। আতিফ কণ্ঠ দিলেই যেন তাতে সোনা ফলে। গান হয় হিট। রহস্য কী? ‘ওপরওয়ালা জানেন। তিনি হয়তো আমার ভাগ্যে লিখে দিয়েছেন। তা না হলে আমার তো ক্রিকেটার হওয়ার কথা ছিল। গায়ক হব কেন?’ আতিফের উত্তর। ‘একসময় ইমরান খানের অন্ধ ভক্ত ছিলাম। ওর মতো ফাস্ট বোলার হতে চাইতাম। পাকিস্তানের অনূর্ধ্ব-১৯ দলে ফাস্ট বোলার হিসেবে জায়গাও পেয়েছিলাম। সেখান থেকে কীভাবে যে গায়ক হয়ে গেলাম, সেটা খোদাই জানেন।’ কে জানে গায়ক না হলে হয়তো আমির, আসিফের সঙ্গে আতিফ আসলামও এই মুহূর্তে ইংল্যান্ডের ব্যাটিং অর্ডারে কাঁপন ধরাতেন। সে কথা বলতেই আতিফ বললেন, ‘হ্যাঁ, থ্রি “এ” (আমির, আসিফ, আতিফ) থাকলে অস্ট্রেলিয়া সেদিন ৮৮ রানও করতে পারত কি না, কে জানে! হা হা হা...।’ গানের ব্যস্ততার ভিড়েও ক্রিকেটের খবর রাখেন ষোলোআনা।
পাকিস্তান থেকে ভারতে গিয়ে গান করেন। কোনো সমস্যা হয় না? ‘সরকারের উচ্চপর্যায়ে কিছু সমস্যা হয়তো হয়। কিন্তু আমি একটা বর্ডার ছাড়া আর কোনো পার্থক্য পাই না। ভাষা, আচার-ব্যবহার, মন-মানসিকতায় অনেক মিল। আর সবচেয়ে বড় কথা, বলিউডের সবার কাছ থেকে আমি প্রচুর সহযোগিতা পাই। একটা কথা আমি জোর দিয়ে বলতে পারি, ভারতের জনগণ জানে কীভাবে একজন শিল্পীকে সম্মান করতে হয়। সে কারণেই দেশটায় এত ভালো, কালজয়ী শিল্পীর সমাগম। উপমহাদেশের অন্য কোনো দেশে কোনো শিল্পী এতটা সম্মান পান না, যেটা ভারতের মাটিতে পান। এমন পরিবেশে শিল্পের জন্য জীবন উৎসর্গ করেও আনন্দ।’
গাড়ি তখন ছুটছে উত্তরার দিকে। বাইরের বৃষ্টি দেখে আপনমনে শাস্ত্রীয় সংগীতের সুর ভাজা শুরু করেছেন। সময়টা বেশ উপভোগ করছেন বোঝাই যায়। রেওয়াজ করেন নিয়মিত? বৃষ্টির ছাটে হাত বাড়িয়ে দিতে দিতে বললেন, ‘আগের মতো সময় পাই না। তাই প্লেনে, বাসে বা গাড়িতেই রেওয়াজ শুরু করে দিই। বলতে পারেন সময়ের সদ্ব্যবহার করি।’
গত বছর কোক স্টুডিও অনুষ্ঠানে আতিফকে দেখা গেছে অন্যরূপে। শুধু পপ বা রক নয়, শাস্ত্রীয় সংগীতেও দখল আতিফকে চিনিয়েছে নতুন করে। ওস্তাদ রিয়াজ আলী খাঁর সঙ্গে যৌথভাবে গেয়েছিলেন কিনারা গানটি। যাঁরা সেটা দেখেছেন, সহজে ভুলবেন বলে মনে হয় না। ‘ও লামহে, আদাত’ গাইতে গাইতে আমি তখন খুব বিরক্ত। এর বাইরে কি আমার কোনো ভালো গান নেই! কোক স্টুডিওর পরিচালকও এই দুটি গান করতে বললেন। কিন্তু আমি গোঁ ধরে করলাম আমার পছন্দের গান। সব সময় জনপ্রিয় গান কেন করতে হবে! ভালো গানের জন্যও একটু জায়গা দেওয়া উচিত।’ তাতে যে ভালোই হয়, তার প্রমাণ তো আতিফ নিজেই।
শুধু কণ্ঠ নয়, চেহারাও নায়কের মতো আতিফ আসলামের। বলিউডের পরিচালক-প্রযোজকদের সঙ্গে নিত্য ওঠাবসা। নায়ক হওয়ার প্রস্তাব পাননি? ‘সে আর বলতে! প্রচুর। কিন্তু চিত্রনাট্য পছন্দ না হওয়ায় করিনি। গতানুগতিক প্রেমের গল্পে অভিনয় করতে চাই না। তবে এরই মধ্যে আমি আমার প্রথম ছবির কাজ শেষ করেছি। তবে সেটা বলিউডে নয়, ললিউডে (লাহোর)। বোল নামের এ চলচ্চিত্রে আমার চরিত্র একজন ডাক্তারের। এ বছরের শেষ দিকে চলচ্চিত্রটি মুক্তি পাবে।’ বছরের শেষ দিকে আরও মুক্তি পাবে আতিফের চতুর্থ অ্যালবাম শবনম। তবে এই মুহূর্তে আতিফ ব্যস্ত বিখ্যাত ব্যান্ড গানস অ্যান্ড রোজেসকে নিয়ে। একসঙ্গে তাঁরা একটি অ্যালবাম করছেন। ‘আমি নিজে গানস অ্যান্ড রোজেস-এর ভক্ত। এই অ্যালবামটি আমার জীবনে একটি মাইলফলক হয়ে থাকবে। সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী বছরই অ্যালবামটি বাজারে ছাড়ব।’
একসময় কথা শেষ হয়ে যায়। কিন্তু বৃষ্টি শেষ হয় না। আতিফ মুগ্ধ নয়নে সেদিকেই তাকিয়ে আছেন। বাংলাদেশি ভক্তদের জন্য কোনো শেষ কথা? ‘ভক্তরা যাঁরা আমার সঙ্গে যোগাযোগ করতে চান, তাঁরা www.aadeez.com এই ঠিকানায় যোগাযোগ করুন। সময় পেলেই আমি এই ওয়েবসাইটে বসি। ভক্তদের সঙ্গে সময় কাটাই। বাংলাদেশি ভক্তরা অসাধারণ। বাংলাদেশি শাড়ি চোখে লেগে থাকার মতো। এই দেশটায় আমি বারবার আসতে চাই।’

No comments:

Post a Comment

kazi-music