
পাঁচ শতাধিক ছবিতে মা হয়েছেন তিনি। কখনো নায়কের, আবার কখনো নায়িকার মা। তাঁর মধ্যে নিজের মাকে খুঁজে পান দর্শকরা। আগামীকাল মুক্তি পাচ্ছে আনোয়ারা অভিনীত 'মায়ের চোখ'। তাঁকে নিয়ে লিখেছেন সুদীপ কুমার দীপ।
তাঁর মায়াভরা মুখ, শান্ত-স্থির চোখ যেন সারাক্ষণ সন্তানের জন্য অকৃপণ ভালোবাসা দিতে চায়। বিভিন্ন ছবিতে দেখা যায় তাঁকে, নিজে না খেয়ে, নিজে না পরে সন্তানের জন্য তুলে রাখেন। দুই চোখে টলমল জল নিয়ে ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটিয়ে সন্তানের সুখ খোঁজেন। শত নির্যাতন মাথা পেতে নিয়ে সন্তানকে দিতে চান স্বর্গ। তাঁর অকৃত্রিম অভিনয়ে হাজারবার মনে উঁকি দেয় সেই সত্য 'মায়ের পায়ের নিচে সন্তানের বেহেশত'।
প্রথম থেকেই (১৯৬৪) সুঅভিনেত্রী হতে চেয়েছিলেন আনোয়ারা। বাবা যখন প্রথম তাঁকে নিয়ে পরিচালক এহ্তেশামের কাছে গেলেন তখন তাঁর বয়স ১৩ কী ১৪। এহ্তেশাম বেশ কিছু সময় তাঁর মুখের দিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলেন। পরে তিনি তাঁকে বললেন, আচ্ছা, তুমি তো নায়িকা না অভিনেত্রী হতে চাও, তাহলে এই ডায়ালগটা একটু রোমান্স দিয়ে বলো তো_'তুমি কি জানো, এর পরিণাম কী হতে পারে?' আনোয়ারা তখন বেশ মঞ্চনাটক দেখতেন। নিজেও মাঝেমধ্যে মঞ্চনাটকে কাজ করতেন। মঞ্চে কোনো ডায়ালগ দিতে গেলে একটু জোরেই বলতে হয়, যেন দর্শকদের কান পর্যন্ত পেঁৗছে। তিনি সেই কথা চিন্তা করে বেশ উচ্চৈঃস্বরে ডায়ালগ বললেন, 'তুমি কি জানো এর পরিণাম কী হতে পারে?' এহ্তেশাম তো ভড়কে গেলেন। পরে তিনি বোঝালেন মঞ্চে তো সরাসরি অভিনয়ের সঙ্গে ডায়ালগ দিতে হয়; কিন্তু সিনেমায় আগে অভিনয়, পরে ডাবিংয়ে ডায়ালগ বলতে হয়। আনোয়ারা ব্যাপারটি বুঝলেন এবং পরে ওই ডায়ালগটিই নিজের মতো করে দিলেন। শুনে এহ্তেশাম খুব খুশি হলেন এবং তাঁর বাবাকে বললেন, 'আপনার মেয়েকে আমি চার বছরের জন্য চুক্তিবদ্ধ করতে চাই। এই চার বছর সে আমার ছবি ছাড়া অন্য কারো ছবি করতে পারবে না।' তারপর অবশ্য তাঁর মায়ের সঙ্গে আলোচনা করে আর রাজি হননি। অভিনেত্রী হিসেবে আনোয়ারার টার্নিং পয়েন্ট 'নবাব সিরাজউদ্দৌলা'। এ ছবিতে তিনি আলেয়া চরিত্রে অভিনয় করে সিনেমাপ্রেমীদের অন্তরে জায়গা করে নিয়েছিলেন।
এরপর উর্দু এবং বাংলা ছবিতে একের পর এক অভিনয় করে দিন দিন তাঁর জায়গা শক্ত হয়। রিকশাচালক থেকে শুরু করে একজন শিক্ষককে যদি প্রশ্ন করা হয়, কোন অভিনেত্রীকে আপনারা মায়ের চরিত্রে বেশি পছন্দ করেন, তাহলে এক বাক্যে উত্তর আসবে 'আনোয়ারা'। আনোয়ারা 'নয়নমণি' ছবির মাধ্যমে চাচিমা চরিত্রে সর্বপ্রথম কাজ করেন। তিনি বলেন, 'নয়নমণি ছবিতে যদিও আমি নায়ক ফারুকের চাচিমার চরিত্র করেছিলাম, তবুও দর্শকরা এ ছবিতে আমাকে ফারুকের মা হিসেবেই স্বীকৃতি দেয়। আমিও সেই কারণে এ চরিত্রটিকে আমার ক্যারিয়ারের প্রথম মা হিসেবে জানি। তিনি মা চরিত্রে আজ পর্যন্ত পাঁচ শর বেশি ছবি করেছেন। মা হয়েছেন সোহেল রানা, ফারুক, জসীম থেকে শুরু করে আজকের রিয়াজ, শাকিব পর্যন্ত। তিনি আরো বলেন, 'আমি শুধু যে ছেলেদের মা হয়েছি তা কিন্তু নয়। মেয়েদেরও মা হয়েছি। আমার মেয়ে হয়েছেন সুচরিতা, রোজিনা, শাবানা থেকে আজকের শাবনূর, পপি, পূর্ণিমা পর্যন্ত। অতএব চলচ্চিত্রে আমার সন্তান অনেক।' আনোয়ারা তাঁর মা হওয়া নিয়ে গর্বিত। হাজারো স্মৃতি তাঁর সন্তানদের নিয়ে। 'আমার এমনি এক সন্তান আবুল কালাম আজাদ। সে একটি পত্রিকায় সম্পাদক বরাবর লেখে, 'জনাব, আমার মা বেগম আনোয়ারা যদি দুবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার না পান, তাহলে আমরা যারা তাঁর লাখো সন্তান আছি, তারা এ পুরস্কার মানব না।'_বললেন আনোয়ারা। তিনি আরো বলেন, 'এ রকম পাগল সন্তান আমার দেশজোড়া। তারা সব সময় আমার খোঁজখবর রাখে, ভালো-মন্দ জানার চেষ্টা করে। এ যেন আত্দার বন্ধন।' চরিত্রের প্রয়োজনে কখনো কখনো তাঁকে বয়সের বড় অনেকের মা হতে হয়েছে; কিন্তু কোনো সময় খারাপ লাগেনি। চরিত্রটাকেই তিনি প্রাধান্য দিয়েছেন বেশি। আজ পর্যন্ত আটবার জাতীয় পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন আনোয়ারা। 'শুভদা', 'রাধা কৃষ্ণ' এবং 'গোলাপী এখন ট্রেনে' ছবি তিনটিতে মায়ের চরিত্র করে পেয়েছিলেন এ পুরস্কার।
কিন্তু তাঁর কাছে এসব বস্তুগত পুরস্কারের চেয়ে ভালোবাসার পুরস্কারই বড় পাওয়া, যেটা তিনি পেয়েছেন।
একবার এক ভক্ত তাঁকে বলেছিলেন, আপনি শুধু দুখিনী মায়ের চরিত্র করেন কেন? উত্তরে তিনি বলেছিলেন, বাংলার প্রত্যেক মা-ই তো দুখিনী। তাঁদের হাজারো দুঃখকষ্ট নিত্যসঙ্গী, আমি নিজের মধ্যে তাঁদের প্রতিচ্ছবি তুলে ধরি। তাই তো আমিও দুখিনী মা। দুখিনী মায়ের চরিত্র করতে গিয়ে তিনি যে শুধু দুঃখই বুকে ধারণ করেছেন তা কিন্তু নয়, অনেক সময় সেটে বেশ মজাও করেন এ অভিনেত্রী। একবার পরিচালক শেখ নজরুলকে তিনি বলেছিলেন, 'আচ্ছা আপনারা শুধু আমাদের ভিলেনের হাতে মার খাওয়ান। আমরা কেন দুই-একটা ঝাড়ুপেটা করতে পারি না? আমরা শুধু আমাদের সন্তানদের মুখাপেক্ষী হয়ে থাকব?' শুনে ওই দিন সেটের সবাই হেসে অস্থির। আনোয়ারা বাস্তব জীবনেও একজন মা। তিনি তাঁর সন্তানকে পর্দার মায়ের মতোই ভালোবাসেন। রাত-দিন শুটিং করে এসেও নিজের সন্তানদের প্রতি খেয়াল নেওয়া, তাদের ভালো-মন্দ, অভাব পূরণ করা একজন প্রকৃত মা বলেই তাঁর পক্ষে সম্ভব। আর এ জন্যই পর্দায় তাঁর কান্না দেখে লাখো দর্শক বাস্তবে তাদের বুক ভাসায়।
তাঁর মায়াভরা মুখ, শান্ত-স্থির চোখ যেন সারাক্ষণ সন্তানের জন্য অকৃপণ ভালোবাসা দিতে চায়। বিভিন্ন ছবিতে দেখা যায় তাঁকে, নিজে না খেয়ে, নিজে না পরে সন্তানের জন্য তুলে রাখেন। দুই চোখে টলমল জল নিয়ে ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটিয়ে সন্তানের সুখ খোঁজেন। শত নির্যাতন মাথা পেতে নিয়ে সন্তানকে দিতে চান স্বর্গ। তাঁর অকৃত্রিম অভিনয়ে হাজারবার মনে উঁকি দেয় সেই সত্য 'মায়ের পায়ের নিচে সন্তানের বেহেশত'।
প্রথম থেকেই (১৯৬৪) সুঅভিনেত্রী হতে চেয়েছিলেন আনোয়ারা। বাবা যখন প্রথম তাঁকে নিয়ে পরিচালক এহ্তেশামের কাছে গেলেন তখন তাঁর বয়স ১৩ কী ১৪। এহ্তেশাম বেশ কিছু সময় তাঁর মুখের দিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলেন। পরে তিনি তাঁকে বললেন, আচ্ছা, তুমি তো নায়িকা না অভিনেত্রী হতে চাও, তাহলে এই ডায়ালগটা একটু রোমান্স দিয়ে বলো তো_'তুমি কি জানো, এর পরিণাম কী হতে পারে?' আনোয়ারা তখন বেশ মঞ্চনাটক দেখতেন। নিজেও মাঝেমধ্যে মঞ্চনাটকে কাজ করতেন। মঞ্চে কোনো ডায়ালগ দিতে গেলে একটু জোরেই বলতে হয়, যেন দর্শকদের কান পর্যন্ত পেঁৗছে। তিনি সেই কথা চিন্তা করে বেশ উচ্চৈঃস্বরে ডায়ালগ বললেন, 'তুমি কি জানো এর পরিণাম কী হতে পারে?' এহ্তেশাম তো ভড়কে গেলেন। পরে তিনি বোঝালেন মঞ্চে তো সরাসরি অভিনয়ের সঙ্গে ডায়ালগ দিতে হয়; কিন্তু সিনেমায় আগে অভিনয়, পরে ডাবিংয়ে ডায়ালগ বলতে হয়। আনোয়ারা ব্যাপারটি বুঝলেন এবং পরে ওই ডায়ালগটিই নিজের মতো করে দিলেন। শুনে এহ্তেশাম খুব খুশি হলেন এবং তাঁর বাবাকে বললেন, 'আপনার মেয়েকে আমি চার বছরের জন্য চুক্তিবদ্ধ করতে চাই। এই চার বছর সে আমার ছবি ছাড়া অন্য কারো ছবি করতে পারবে না।' তারপর অবশ্য তাঁর মায়ের সঙ্গে আলোচনা করে আর রাজি হননি। অভিনেত্রী হিসেবে আনোয়ারার টার্নিং পয়েন্ট 'নবাব সিরাজউদ্দৌলা'। এ ছবিতে তিনি আলেয়া চরিত্রে অভিনয় করে সিনেমাপ্রেমীদের অন্তরে জায়গা করে নিয়েছিলেন।
এরপর উর্দু এবং বাংলা ছবিতে একের পর এক অভিনয় করে দিন দিন তাঁর জায়গা শক্ত হয়। রিকশাচালক থেকে শুরু করে একজন শিক্ষককে যদি প্রশ্ন করা হয়, কোন অভিনেত্রীকে আপনারা মায়ের চরিত্রে বেশি পছন্দ করেন, তাহলে এক বাক্যে উত্তর আসবে 'আনোয়ারা'। আনোয়ারা 'নয়নমণি' ছবির মাধ্যমে চাচিমা চরিত্রে সর্বপ্রথম কাজ করেন। তিনি বলেন, 'নয়নমণি ছবিতে যদিও আমি নায়ক ফারুকের চাচিমার চরিত্র করেছিলাম, তবুও দর্শকরা এ ছবিতে আমাকে ফারুকের মা হিসেবেই স্বীকৃতি দেয়। আমিও সেই কারণে এ চরিত্রটিকে আমার ক্যারিয়ারের প্রথম মা হিসেবে জানি। তিনি মা চরিত্রে আজ পর্যন্ত পাঁচ শর বেশি ছবি করেছেন। মা হয়েছেন সোহেল রানা, ফারুক, জসীম থেকে শুরু করে আজকের রিয়াজ, শাকিব পর্যন্ত। তিনি আরো বলেন, 'আমি শুধু যে ছেলেদের মা হয়েছি তা কিন্তু নয়। মেয়েদেরও মা হয়েছি। আমার মেয়ে হয়েছেন সুচরিতা, রোজিনা, শাবানা থেকে আজকের শাবনূর, পপি, পূর্ণিমা পর্যন্ত। অতএব চলচ্চিত্রে আমার সন্তান অনেক।' আনোয়ারা তাঁর মা হওয়া নিয়ে গর্বিত। হাজারো স্মৃতি তাঁর সন্তানদের নিয়ে। 'আমার এমনি এক সন্তান আবুল কালাম আজাদ। সে একটি পত্রিকায় সম্পাদক বরাবর লেখে, 'জনাব, আমার মা বেগম আনোয়ারা যদি দুবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার না পান, তাহলে আমরা যারা তাঁর লাখো সন্তান আছি, তারা এ পুরস্কার মানব না।'_বললেন আনোয়ারা। তিনি আরো বলেন, 'এ রকম পাগল সন্তান আমার দেশজোড়া। তারা সব সময় আমার খোঁজখবর রাখে, ভালো-মন্দ জানার চেষ্টা করে। এ যেন আত্দার বন্ধন।' চরিত্রের প্রয়োজনে কখনো কখনো তাঁকে বয়সের বড় অনেকের মা হতে হয়েছে; কিন্তু কোনো সময় খারাপ লাগেনি। চরিত্রটাকেই তিনি প্রাধান্য দিয়েছেন বেশি। আজ পর্যন্ত আটবার জাতীয় পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন আনোয়ারা। 'শুভদা', 'রাধা কৃষ্ণ' এবং 'গোলাপী এখন ট্রেনে' ছবি তিনটিতে মায়ের চরিত্র করে পেয়েছিলেন এ পুরস্কার।
কিন্তু তাঁর কাছে এসব বস্তুগত পুরস্কারের চেয়ে ভালোবাসার পুরস্কারই বড় পাওয়া, যেটা তিনি পেয়েছেন।
একবার এক ভক্ত তাঁকে বলেছিলেন, আপনি শুধু দুখিনী মায়ের চরিত্র করেন কেন? উত্তরে তিনি বলেছিলেন, বাংলার প্রত্যেক মা-ই তো দুখিনী। তাঁদের হাজারো দুঃখকষ্ট নিত্যসঙ্গী, আমি নিজের মধ্যে তাঁদের প্রতিচ্ছবি তুলে ধরি। তাই তো আমিও দুখিনী মা। দুখিনী মায়ের চরিত্র করতে গিয়ে তিনি যে শুধু দুঃখই বুকে ধারণ করেছেন তা কিন্তু নয়, অনেক সময় সেটে বেশ মজাও করেন এ অভিনেত্রী। একবার পরিচালক শেখ নজরুলকে তিনি বলেছিলেন, 'আচ্ছা আপনারা শুধু আমাদের ভিলেনের হাতে মার খাওয়ান। আমরা কেন দুই-একটা ঝাড়ুপেটা করতে পারি না? আমরা শুধু আমাদের সন্তানদের মুখাপেক্ষী হয়ে থাকব?' শুনে ওই দিন সেটের সবাই হেসে অস্থির। আনোয়ারা বাস্তব জীবনেও একজন মা। তিনি তাঁর সন্তানকে পর্দার মায়ের মতোই ভালোবাসেন। রাত-দিন শুটিং করে এসেও নিজের সন্তানদের প্রতি খেয়াল নেওয়া, তাদের ভালো-মন্দ, অভাব পূরণ করা একজন প্রকৃত মা বলেই তাঁর পক্ষে সম্ভব। আর এ জন্যই পর্দায় তাঁর কান্না দেখে লাখো দর্শক বাস্তবে তাদের বুক ভাসায়।
No comments:
Post a Comment