CRICKET LIVE STREAMING

Wednesday, May 4, 2011

লাদেনের খোঁজ মিলল যেভাবে


বছরের পর বছর ধরে নিজেদের প্রধান শত্রু ওসামা বিন লাদেনকে হন্যে হয়ে খুঁজেছে যুক্তরাষ্ট্র। কোনো ফল হয়নি। অবশেষে গত জুলাইতে এসে আশার আলো দেখতে পায় তারা। মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএর পাকিস্তানি এজেন্টরা একটি সুজুকি গাড়ির দেখা পান পাকিস্তানের পেশোয়ার শহরের ব্যস্ততম রাস্তায়। গাড়ির নম্বরটি টুকে নেন তাঁরা।
গাড়ির চালকের আসনে যে লোকটি ছিলেন, তিনি বিন লাদেনের বিশ্বস্ত সেই বার্তাবাহক। পরের কয়েক মাস ধরে তাঁকে চোখে চোখে রাখেন সিআইএর এজেন্টরা। আর তিনি ঘুরে বেড়িয়েছেন পাকিস্তানের মধ্যাঞ্চলজুড়ে। অবশেষে রাজধানী ইসলামাবাদ থেকে ৫৫ কিলোমিটার দূরে অ্যাবোটাবাদ শহরের সেই বাড়িটির সন্ধান পায় সিআইএ।
তার পর কেটে যায় আরও কয়েকটি মাস। অবশেষে বেছে নেওয়া হয় গত রোববারের অমাবস্যার রাতটা। ৭৯ সদস্যের মার্কিন মেরিন সেনার একটি দল চারটি হেলিকপ্টার নিয়ে অবতরণ করে ওই বাড়ির আঙিনায়। শুরু হয় গোলাগুলি। মিত্র পাকিস্তানকে সম্পূর্ণ অন্ধকারে রেখেই মার্কিন মেরিন সেনারা দ্রুত শেষ করেন এই অভিযান। নিহত হন পাঁচজন। তাঁদের মধ্যে আছেন লম্বা সেই মানুষটিও, যাঁর দাড়িভর্তি মুখটি ততক্ষণে ভেসে গেছে রক্তে। গুলি লেগেছে কপালে। মেরিন সেনাদের একজন ক্যামেরায় ওই মুখের ছবিটি তুলে পাঠিয়ে দেন বিশ্লেষকদের কাছে। পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে তাঁরা নিশ্চিত হন যে এই সেই ব্যক্তি, যাঁকে ১০ বছর ধরে তাঁরা হন্যে হয়ে খুঁজছেন; যাঁর মাথার দাম ঘোষণা করা হয়েছিল আড়াই কোটি মার্কিন ডলার। হ্যাঁ, তিনিই সেই ওসামা বিন লাদেন।
রোববার রাতের ওই মাত্র ৪০ মিনিটের অভিযানের মধ্য দিয়ে শেষ হলো মাত্র একজন ব্যক্তিকে খুঁজে বের করার দীর্ঘমেয়াদি সেই অভিযানের, যে অভিযানে যুক্তরাষ্ট্রের টাকার শ্রাদ্ধ হয়েছে। যে ব্যক্তিটির জন্য পুরো একটি দশক ভয়ে, শঙ্কায় কাটিয়েছে মার্কিন মুলুকের মানুষ; তিনি আর কখনো আবির্ভূত হবেন না মূর্তিমান আতঙ্ক হয়ে। তাঁকে সমাহিত করা হয়েছে আরব সাগরের নীল পানিতে।
ওসামা বিন লাদেনকে খুঁজে বের করতে না পারার ব্যর্থতার জন্য এক দশক ধরে সমালোচনা সহ্য করতে হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ঘাঘু গোয়েন্দাদের। বিন লাদেনকে হত্যা করতে পারা তাঁদের জন্য অবশ্যই স্বস্তির। আর সে দেশের সেনাবাহিনী, যারা আফগানিস্তান, ইরাকের পর লিবিয়া—ইতিমধ্যে তিনটি যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছে, এটা তাদের জন্য সাফল্য তো বটেই। অন্যদিকে দেশের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার সামর্থ্য নিয়ে যে প্রেসিডেন্টের যোগ্যতার বিষয়ে প্রশ্ন উঠেছিল, তার জন্য এটা ঐতিহাসিক একটি মুহূর্ত। ইতিহাসে জায়গা পাবেন তিনি।
মার্কিন গোয়েন্দাদের কয়েক বছরের অক্লান্ত পরিশ্রমের চূড়ান্ত পরিণতি গত রোববারের ওই অভিযান। পূর্ব ইউরোপের গোপন বন্দিশালায় আটক লোকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে সিআইএ। লাদেনের বার্তাবাহকের জন্মভূমি উপসাগরীয় অঞ্চলের একটি দেশে। সেখানে থাকা লোকজনের ফোন ও ই-মেইলে আড়ি পাতা হয়েছে দিনের পর দিন। আর উপগ্রহের মাধ্যমে সংগ্রহ করা অ্যাবোটাবাদের ওই বাড়ির ছবি চুলচেরা বিশ্লেষণ করা হয়েছে। সেখানে যাঁরা থাকছেন, তাঁদের জীবনযাপনের ধারা চুলচেরা বিশ্লেষণ করে দেখা হয়েছে। সব দিক বিবেচনা করে দেখা হয়েছে, ঝুঁকিপূর্ণ ওই অভিযান থেকে আসলে কী পাওয়া যাবে।
মার্কিন গোয়েন্দা ও প্রতিরক্ষা কর্মকর্তারা গত সোমবার অভিযানের বর্ণনা দিয়েছেন। তাঁরা জানান, অভিযানের সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে কয়েক সপ্তাহ ধরে বারবার ভাবা হয়েছে—অভিযান যদি ব্যর্থ হয়, তাহলে তার ফল কী দাঁড়াবে? এ সময় তাঁদের মনে হয়েছে ১৯৯৩ সালে সোমালিয়ায় সেই অভিযানের কথা, যখন মার্কিন বাহিনীর দুটি হেলিকপ্টার গুলি করে ভূপাতিত করা হয়। নিহত হন অভিযানে অংশ নেওয়া অনেক সদস্য। মনে পড়েছে ১৯৭৯ সালে ইরানে জিম্মিদের উদ্ধারের সেই ব্যর্থ অভিযানের স্মৃতি।
শেষ মুহূর্ত পর্যন্তও দ্বিধাদ্বন্দ্বে ছিলেন মার্কিন প্রশাসনের শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তারা। কেউ কেউ অভিযান চালানোর পক্ষে কথা বললেও অন্যরা বলেছেন, না, এখনো সময় আসেনি। আরও পর্যবেক্ষণ করা হোক, বিন লাদেন যে ওই বাড়িতে আছেন, এটা আগে চূড়ান্তভাবে নিশ্চিত হওয়া দরকার। তার পরই অভিযান চালানো বুদ্ধিমানের কাজ হবে। আবার অন্যরা বলেছেন, অভিযানের ঝুঁকি নেওয়ার দরকার নেই। বোমা ফেলা হোক ওই বাড়িতে। ওসামা থাকলে তো মরবেনই। সবার মতামত নেওয়ার পর প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা বললেন, না, বোমা ফেলা যাবে না। তাতে বরং বেশি ক্ষয়ক্ষতি হবে। তা ছাড়া বিন লাদেন যদি ওই বাড়িতে থাকেন, তাহলে ওইভাবে আন্দাজে বোমা ফেলে তাঁর মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যাবে না। সিদ্ধান্ত দিলেন ওবামা। কমান্ডো দলকেই অভিযানে যেতে হবে। চূড়ান্ত কাজের দায়িত্বে থাকবে দুটি হেলিকপ্টার। কাজ শেষ করে তাদের বেরিয়ে আসতে হবে। যদি কোনো রকম সমস্যা দেখা যায়, তখন তাদের সহযোগিতা দিতে পেছনে থাকবে আরও দুটি হেলিকপ্টার।
রোববার সন্ধ্যা। আফগানিস্তানের জালালাবাদ ঘাঁটি থেকে উড়ল চারটি জঙ্গি হেলিকপ্টার। গন্তব্য পাকিস্তান। প্রেসিডেন্ট ওবামা তখন উপদেষ্টাদের নিয়ে ঢুকলেন হোয়াইট হাউসের সিচুয়েশন রুমে। অভিযান সরাসরি দেখতে টেলিভিশনের পর্দার সামনে বসলেন তাঁরা। ধীরে ধীরে শক্ত হয়ে উঠছে ওবামার চোয়াল। ভাইস প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন আঙুলে নাড়াচাড়া করছেন জপমালা।
ওই সময়কার পরিস্থিতির বর্ণনা দিতে গিয়ে হোয়াইট হাউসের সন্ত্রাসবাদবিরোধী প্রধান জন ও ব্রেনান পরে বলেছেন, ‘প্রতিটি মিনিটকে মনে হচ্ছিল এক একটি দিন।’
অভিযানের সময় ব্যবহারের জন্য বিন লাদেনের সাংকেতিক নাম ঠিক করা হয় ‘জেরোনিমো’। প্রেসিডেন্ট ওবামা ও তাঁর উপদেষ্টারা টেলিভিশনে দেখছেন, সিআইএর পরিচালক লিও ই পানেত্তা পোটোম্যাক নদীর ওপারে সংস্থার সদর দপ্তর থেকে বর্ণনা দিচ্ছেন, হাজার মাইল দূরে পাকিস্তানে কী ঘটছে।
পানেত্তা: ‘তাঁরা লক্ষ্যস্থলে পৌঁছে গেছেন।’
এরপর চলে গেল কয়েক মিনিট।
আবার পানেত্তা: ‘আমরা জেরোনিমোর মুখের ছবি পেয়ে গেছি।’
আরও কয়েক মিনিট পর পানেত্তা বলেন, ‘জেরোনিমো ই. কে. আই. এ.।’ এই অক্ষরগুলোর পূর্ণ রূপ হলো, এনিমি কিলড ইন অ্যাকশন অর্থাৎ, লড়াইয়ে শত্রু খতম।
পানেত্তার ওই কথার পর সিচুয়েশন রুমে নেমে এল পিনপতন নিস্তব্ধতা।
প্রথম কথা বলে উঠলেন প্রেসিডেন্ট ওবামা, ‘আমরা তাঁকে পাকড়াও করেছি।’
নাইন-ইলেভেনের হামলার কয়েক বছর আগে থেকেই বিন লাদেনের ব্যাপারে তথ্য সংগ্রহ করা শুরু করে সিআইএ। একই সঙ্গে তাঁর সংগঠনের বড় বড় নেতার ব্যাপারে খোঁজখবর নেওয়াও শুরু হয়। এর মধ্যেই তো ঘটে গেল নাইন-ইলেভেনের বিভীষিকাময় ঘটনা। বিন লাদেন হয়ে উঠলেন যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় শত্রু। ২০০২ সালে আল-কায়েদার কিছু সদস্যকে গ্রেপ্তারের পর জিজ্ঞাসাবাদে সিআইএ তাঁদের কাছ থেকে ধীরে ধীরে তথ্য পেতে থাকল যে আল-কায়েদায় কারা কাজ করছে, তাদের অর্থের জোগান কোথা থেকে আসছে।
আটক ওই সব লোকের কাছ থেকে লাদেনের একজন বিশ্বস্ত বার্তাবাহকের কথা জানতে পারে সিআইএ। কিন্তু কোনোভাবেই তাঁর পরিচয় বের করতে পারছিল না তারা। ২০০৫ সালে গিয়ে ওই বার্তাবাহকের পরিবার সম্পর্কে জানতে পারে সিআইএ। তখন তারা তদন্তের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পদ্ধতিটির প্রয়োগ শুরু করে। ওই পরিবারের লোকজনের টেলিফোন ও ই-মেইলে আড়ি পাতে সিআইএ। দেখা যায়, পাকিস্তান থেকে কেউ তাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ করছে। এভাবেই লাদেনের ওই বার্তাবাহকের নাম পেয়ে যায় সিআইএ।
গত জুলাইয়ের শেষ দিকে পাকিস্তানে সিআইএর এজেন্টরা দেখতে পান, ওই বার্তাবাহক পেশোয়ারের রাস্তায় গাড়ি চালিয়ে যাচ্ছেন। কয়েক সপ্তাহ তাঁর ওপর কড়া নজর রাখার পর দেখা যায়, তিনি অ্যাবোটাবাদের ওই বাড়িতে ঢুকছেন। মার্কিন গোয়েন্দাদের কাছে মনে হলো, গুরুত্বপূর্ণ কিছু পেয়ে গেছেন তাঁরা। তিনতলা বাড়িটির চারপাশে ১০ থেকে ১২ ফুট উচ্চতার সীমানাপ্রাচীর। তার ওপর আবার কাঁটাতার বসানো।
এসব তথ্য পাওয়ার পর ওয়াশিংটনে প্রেসিডেন্ট ওবামা, ভাইস প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী রবার্ট গেটসের সঙ্গে বৈঠকে বসলেন সিআইএর প্রধান পানেত্তা। এতটাই গোপনে ওই বৈঠক হলো যে হোয়াইট হাউসের অন্য কর্মকর্তারাও কিছু জানলেন না আলোচনার বিষয়ে। পানেত্তা জোর দিয়ে বললেন, বিন লাদেন সেখানেই আছেন। পারলে তিনি তখনই অভিযান চালাতে বললেন। কিন্তু সিদ্ধান্ত হলো, আরও পর্যবেক্ষণ করতে হবে। সে অনুযায়ী পর্যবেক্ষণ করা হলো আরও কয়েক সপ্তাহ। একপর্যায়ে সিআইএর অন্য শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তারা অধৈর্য হয়ে পড়েন। তাঁদের মনে হতে থাকে, নজরদারির বিষয়টি ওই বাড়ির নিরাপত্তারক্ষীদের নজরে পড়লে সব ভণ্ডুল হয়ে যেতে পারে। ওসামা চলে যেতে পারেন ওই এলাকা ছেড়ে।
সর্বশেষ গত শরৎকালে কয়েক সপ্তাহ ধরে উপগ্রহের মাধ্যমে নেওয়া হয় ওই বাড়ির ছবি। বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, বাড়িটিতে কোনো টেলিফোন লাইন নেই, নেই কোনো ইন্টারনেট সংযোগ। বাড়ির লোকজন নিরাপত্তা নিয়ে এতটাই সচেতন যে বাড়ির ময়লা তাঁরা বাইরে রাস্তার পাশে ফেলছেন না। বরং বাড়ির ভেতরেই প্রাচীরঘেরা একটি ফাঁকা জায়গায় পুড়িয়ে ফেলছেন।
গত ফেব্রুয়ারিতে পানেত্তা ডেকে পাঠালেন জয়েন্ট স্পেশাল অপারেশনসের কমান্ডার ভাইস অ্যাডমিরাল উইলিয়াম এইচ ম্যাকরাভেনকে। প্রাপ্ত সব ধরনের তথ্য-উপাত্ত ও ছবি তাঁর হাতে তুলে দিয়ে বলা হলো অভিযানের ছক কষতে।
কয়েক সপ্তাহ ধরে অনেক হিসাব-নিকাশ করে অভিযানের তিনটি ভিন্ন বিকল্প ঠিক করলেন ম্যাকরাভেন। ১. হেলিকপ্টার নিয়ে কমান্ডোদের অভিযান। ২. বি-টু বোমারু বিমান দিয়ে বোমা ফেলে ওই বাড়িটি মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়া। ৩. পাকিস্তানি বাহিনীকে সঙ্গে নিয়ে ওই বাড়িতে একটি যৌথ অভিযান। সে ক্ষেত্রে পাকিস্তানি বাহিনীকে বিষয়টি জানানো হবে অভিযানের দু-এক ঘণ্টা আগে।
ম্যাকরাভেনের এই প্রস্তাবগুলো গত ১৪ মার্চ হোয়াইট হাউসে পৌঁছে দিলেন পানেত্তা। ২২ মার্চ উপদেষ্টাদের নিয়ে বৈঠকে বসলেন ওবামা। প্রতিরক্ষামন্ত্রী গেটস বললেন, হেলিকপ্টার নিয়ে অভিযানে যাওয়া বেশি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে যাবে। বরং বিমান থেকে বোমা মেরে বাড়িটি ধ্বংস করে দেওয়ার প্রস্তাবটি তাঁর কাছে গ্রহণযোগ্য মনে হয়। প্রস্তাবটি বিস্তারিত পর্যালোচনা করে দেখার জন্য তিনি সেনাবাহিনীর শীর্ষস্থানীয় কর্তাদের নির্দেশ দিলেন। কয়েক দিন পর সেনাকর্তারা প্রতিরক্ষামন্ত্রীকে জানালেন, ওই ধরনের অভিযানের জন্য প্রতিটি ৯০০ কিলোগ্রাম ওজনের কমপক্ষে ৩২টি বোমা দরকার হবে। তা ছাড়া বোমার আঘাতে যে বিন লাদেন মারা গেছেন, সেটাই বা যুক্তরাষ্ট্র কীভাবে নিশ্চিত হবে? একজন কর্মকর্তা বললেন, ‘ওইভাবে বোমা ফেলা হলে বাড়িটি সম্পূর্ণ মাটির সঙ্গে মিশে যাবে, আমরা একটি মৃতদেহও আস্ত পাব না।’
সবকিছু বিচার-বিশ্লেষণ করে মার্কিন কর্তাদের কাছে মনে হলো, হেলিকপ্টার নিয়ে কমান্ডো অভিযানই সবচেয়ে ভালো হবে। সে অনুযায়ী মার্কিন উপকূলের বিভিন্ন প্রশিক্ষণকেন্দ্রে মহড়া শুরু করলেন কমান্ডোরা। কিন্তু তাঁদের জানানো হলো না, অভিযানের লক্ষ্য কে বা কোথায়।
সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার নিরাপত্তা উপদেষ্টাদের নিয়ে আবার বৈঠকে বসলেন ওবামা। তখন সিআইএর পরিচালক পানেত্তা আবারও জোর দিয়ে জানান, তাঁর দলবল পুনরায় সবকিছু পর্যালোচনা করে দেখেছে এবং তারা প্রায় নিশ্চিত, বিন লাদেন ওই বাড়িতেই আছেন। তার পরও বৈঠকে যোগ দেওয়া কয়েকজন অভিযানের সম্ভাব্য ব্যর্থতা এবং তার নেতিবাচক প্রভাব নিয়ে বারবার প্রশ্ন তুললেন। তখন ওবামা বলেন, ‘ঠিক আছে, আমি কী সিদ্ধান্ত নেব, তা এক্ষুনি আপনাদের জানাচ্ছি না। আরেকটু সময় নিয়ে সবকিছু ভেবে দেখি। তবে শিগগিরই একটি সিদ্ধান্ত নেব।’
এর ১৬ ঘণ্টার মধ্যে প্রেসিডেন্ট ওবামা মনস্থির করে ফেললেন। পরদিন সকালেই হোয়াইট হাউসে ডাকলেন শীর্ষস্থানীয় চার উপদেষ্টাকে। তাঁরা কিছু বলার আগেই ওবামা বললেন, ‘ওসব কথা শেষ হয়ে গেছে। আমি চাই যত দ্রুত সম্ভব এই অভিযান চালানো হোক।’ ঠিক হলো রোববারেই হবে অভিযান।
যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় তখন রোববার বেলা দুইটা পাঁচ মিনিট। সিআইএর পরিচালক পানেত্তা শেষবারের মতো ছবি এঁকে সবকিছু বুঝিয়ে দিলেন কমান্ডোদের। এরপর ভার্জিনিয়ার ল্যাংলিতে সংস্থার সদর দপ্তর থেকে ভিডিও সংযোগের মাধ্যমে তিনি যোগ দিলেন হোয়াইট হাউসের সিচুয়েশন রুমে প্রেসিডেন্ট ওবামাসহ অন্যদের সঙ্গে। পানেত্তা জানালেন, কমান্ডোরা পাকিস্তানে ঢুকে গেছেন।
পাকিস্তানে তখন মধ্যরাত। চারটি হেলিকপ্টারের মধ্য থেকে প্রথমটি ভূমির খুব কাছাকাছি চলে আসার পরই মানুষ ঘুমের ঘোরের মধ্যে শুনতে পেল হেলিকপ্টারের কর্কশ শব্দ। এর পরই গুলি ও বিস্ফোরণের ধুমধাম শব্দ। কমান্ডোরা ঢুকে পড়লেন বাড়ির প্রাচীরের মধ্যে। ততক্ষণে শুরু হয়ে গেছে বন্দুকযুদ্ধ। এক ব্যক্তি অজ্ঞাতনামা এক নারীকে সামনে এনে ধরলেন মানববর্ম হিসেবে। গুলিতে মারা গেলেন দুজনই। মারা গেলেন আরও দুজন। এ ছাড়া আহত হলেন দুই নারী।
কমান্ডোরা ওসামা বিন লাদেনকে পেয়ে গেলেন বাড়ির তৃতীয় তলায়। তাঁর পরনে ছিল সালোয়ার-স্যুট। কমান্ডোরা খুব কাছ থেকেই গুলি করলেন তাঁর বাঁ চোখ বরাবর। গুলি মাথা ভেদ করে বেরিয়ে গেল পেছন দিক দিয়ে। মৃত্যু নিশ্চিত করতে দ্বিতীয় গুলি করা হলো তাঁর বুক বরাবর। লুটিয়ে পড়লেন যুক্তরাষ্ট্রের ত্রাস ওসামা বিন লাদেন।

সূত্র: ইন্টারন্যাশনাল হেরাল্ড ট্রিবিউন।

No comments:

Post a Comment

kazi-music