লেকারের ১৯
৯০ রানে ১৯ উইকেট—১৯৫৬ অ্যাশেজের ওল্ড ট্রাফোর্ড টেস্টে ইংলিশ অফ স্পিনার জিম লেকারের চোখ ধাঁধানো বোলিং ফিগার। স্পিন-সহায়ক উইকেটে বাঁহাতি স্পিনার টনি লক কেন মোটে একটা উইকেট পেয়েছিলেন, এটা বিস্ময়কর। কিংবা হয়তো বিস্ময়কর, কীভাবে ওই একটা উইকেট পেয়েছিলেন! লক যখন উইকেটটা পান, তখনো লেকারের ঝুলিতে মোটে ২ উইকেট। এরপর প্রথম ইনিংসে ৯ উইকেট নিলেন ৩৭ রানে। দ্বিতীয় ইনিংসে ৫৩ রানে ১০ উইকেট। অর্ধশতাব্দীর বেশি পেরিয়ে গেছে, হয়ে গেছে আরও দেড় হাজার টেস্ট ম্যাচ, কিন্তু ম্যাচে ১৬ উইকেটের বেশি আর নিতে পারেনি কেউ। প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটেও পারফেকশনের এত কাছে কেউ যেতে পারেনি। লেকারের রেকর্ড কখনো ভাঙবে না, এটা নিয়ে তাই নিশ্চিন্তে বাজি ধরতে পারেন!
বয়সের হাফ সেঞ্চুরি
কোনো ৫০ বছর বয়সী টেস্ট খেলবে, এটা বললে লোকে নিশ্চিতভাবেই পাগল ভাববে। এই যুগে এটা অকল্পনীয়। আর এই যুগেই বা কী, সর্বশেষ বয়সের হাফ সেঞ্চুরিয়ানদের টেস্টে দেখা গেছে তো সেই ১৯২৯-৩০ মৌসুমে! ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরের শেষ টেস্টে জ্যামাইকায় একসঙ্গে খেলেছিলেন টেস্টের সর্বকালের বয়োজ্যেষ্ঠ ক্রিকেটার উইলফ্রেড রোডস ও জর্জ গান। ম্যাচের শেষ দিন রোডসের বয়স ছিল ৫২ বছর ১৬৫ দিন, গানের ৫০ বছর ৩০৩ দিন। ওই টেস্টে ইতিহাস গড়েছেন ক্লিফোর্ড রোচও, রোডসের বলে গানের হাতে ক্যাচ, আউট হয়েছেন ১০৩ বছরের জুটির হাতে! এখন তো ৪০ বছর বয়সী কাউকে পাওয়াই বিরল। টেন্ডুলকার কোথায় থামবেন জানা নেই, তবে ৫০ নয় নিশ্চিতভাবেই!
মুরালির ৮০০
সত্তুরের দশকের শুরুর দিকেও বোঝা যায়নি, ফ্রেড ট্রুম্যানের পর টেস্টে কেউ ৩০০ উইকেট পেতে পারেন। নব্বই দশকের মাঝামাঝি পর্যন্তও ৩০০ উইকেট ছিল বিশেষ এক অর্জন। মুত্তিয়া মুরালিধরন নিজেকে এমন এক উচ্চতায় নিয়ে গেছেন যে ৩০০ উইকেটকেও এখন আর অসাধারণ অর্জন বলে মনে হয় না! মুরালির রেকর্ড টিকে থাকবে, এটা বলায় অবশ্য সামান্য ঝুঁকি থাকছে। ৩১ বছর বয়সী হরভজন সিংয়ের উইকেট ৩৯৩টি। তবে এটা সত্যি, মুরালির ধারেকাছে যেতে হলেও বিশেষ কিছু করতে হবে হরভজন ও অন্যদের।
সেঞ্চুরির ‘প্রায়’ ডাবল সেঞ্চুরি
স্যার জ্যাক হবসের সেঞ্চুরির তালিকাটার দিকে তাকালে নিশ্চয়ই আধুনিক ক্রিকেটারদের চোখ কপালে উঠতে থাকে! ওয়ানডে বা টি-টোয়েন্টির ‘যন্ত্রণা’ ছিল না, অনায়াসেই এক মৌসুমে ৩০টি বা তার বেশি ম্যাচ খেলেছেন, খেলেছেন প্রায় ৫২ বছর বয়স পর্যন্ত। ৮৩৪ প্রথম শ্রেণীর ম্যাচে ৬১,৭৬০ রান ও ১৯৯ সেঞ্চুরি। অবশ্য তাঁর দুটি সেঞ্চুরির প্রথম শ্রেণীর স্ট্যাটাস নিয়ে সংশয় আছে, তার পরও তো ১৯৭! বর্তমানে খেলছেন এমন ক্রিকেটারদের মধ্যে তাঁর সবচেয়ে কাছাকাছি আছেন মার্ক রামপ্রকাশ। বয়স হয়ে গেছে ৪১, হবসের ১৯৭ ছুঁতেও প্রয়োজন আর ‘মাত্র’ ৮৪টি সেঞ্চুরি! হবস অবশ্য এত সব সেঞ্চুরির চেয়েও বড় বলে মানতে পারেন আরেকটি প্রাপ্তিকে। মানুষ হিসেবে ছিলেন অসাধারণ, তাঁর সম্পর্কে একটা বাজে কথা কোনো দিন বলতে পারেননি কোনো সতীর্থ বা প্রতিপক্ষের কেউ!
টিচের ট্রিপল সেঞ্চুরি
একই কথা আবার বলতে হয়। ব্যাটিংয়ে নয়, এটা বোলিংয়ে ট্রিপল সেঞ্চুরি। ইংলিশ মৌসুমে ১০০ উইকেট নেওয়াই এখন বিরল। গত মৌসুমে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি আন্দ্রে অ্যাডামসের উইকেট ছিল ৬৮টি। ১৯২৮ সালে কেন্টের লেগ স্পিনার টিচ ফ্রিম্যান নিয়েছিলেন ‘মাত্র’ ৩০৪ উইকেট! অবাক হচ্ছেন তো? বিস্ময়ের বাকি আছে আরও। পরের সাত মৌসুম টানা পেয়েছিলেন দুশর বেশি উইকেট! ৩৭৭৬ প্রথম শ্রেণীর উইকেট নিয়ে ক্যারিয়ার শেষ করেছেন, প্রথম বিশ্বযুদ্ধ বাগড়া না দিলে হয়তো উইলফ্রেড রোডস থাকতেন তালিকার দুইয়ে!
টেন্ডুলকারের সেঞ্চুরি
শচীন টেন্ডুলকারের শততম আন্তর্জাতিক সেঞ্চুরির অপেক্ষায় আছে পুরে ক্রিকেট বিশ্বই। কোথায় গিয়ে থামবেন কে জানে! সে ভাবনায় গিয়ে তাই লাভ নেই। এখনই তাঁর ৫১ টেস্ট আর ৪৮ ওয়ানডে সেঞ্চুরি; আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ৯৯ সেঞ্চুরি আর কেউ কখনো করতে পারবেন কি না কে জানে। এই মুহূর্তে তো কোনো সম্ভাবনাই দেখা যাচ্ছে না। রেকর্ডে টেন্ডুলকারের নিকটতমেরাও যোজন যোজন পেছনে—রিকি পন্টিংয়ের ৬৯ ও জ্যাক ক্যালিসের ৫৭।
লারার ৫০১
ছোঁয়া অসম্ভব এমন রেকর্ডের তালিকায় সবচেয়ে ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ এটাই। হানিফ মোহাম্মদ ৪৯৯ রানে কাটা পড়ার পর রেকর্ডটা যখন দীর্ঘদিন টিকে রইল, একপর্যায়ে মনে হচ্ছিল, ইনিংসে অর্ধহাজার রান কেউ কোনো দিন করতে পারবেন না। কিন্তু ক্রিকেট দেখল একজন ব্রায়ান লারাকে। এই রেকর্ড ভাঙা খুবই সম্ভব। কিন্তু এখন যে ধরনের ক্রিকেট হচ্ছে, তাতে ৫০২ করতে প্রয়োজন ক্রমাগত মেরে যাওয়া এবং একই সঙ্গে ধৈর্য। লারার মতো, কিন্তু লারা কি আর প্রতিদিনই জন্মায়!
রোডসের চার হাজার
চার হাজার শুনলে রানের কথাই মনে হয়, ভাবা যায়, কেউ চার হাজার উইকেটও নিয়েছেন! অবিশ্বাস্য কাজটি উইলফ্রেড রোডস করেছেন বাঁহাতে! ৩০ বছরের টেস্ট ক্যারিয়ারে এক থেকে এগারো—সব পজিশনে ব্যাটিং করেছেন, ৫৮ টেস্টে দুই হাজারের বেশি রান আর ১২৭ উইকেট। আর ৩২ বছরের প্রথম শ্রেণীর ক্যারিয়ারে ১১১০টি, ভুল পড়ছেন না, ১১১০টি ম্যাচ খেলে নিয়েছেন ৪২০৪ উইকেট! ২০০৭ সালে হাজার উইকেট হয়েছিল ইংলিশ স্পিনার রকার্ট ক্রফটের। এ ছাড়া উইকেটে চার অঙ্ক ছোঁয়ার কথা নিকট অতীতে আর শোনা যায়নি!
কম্পটনের সোনালি মৌসুম
ক্যারিয়ারে ১৮ সেঞ্চুরি হলেও বর্তে যান অনেকে। ডেনিস কম্পটন শুধু ১৯৪৭ সালেই প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে করেছিলেন ১৮ সেঞ্চুরি আর ৩৮১৬ রান! ৩০টি ম্যাচ খেলেছিলেন কম্পটন, পেয়েছিলেন ৫০ ইনিংস। এখনকার ক্রিকেটাররা পান না এর অর্ধেকও। রেকর্ডটাও তাই নিরাপদ!
ভেরিটির দশে দশ
১৯৩২ সালের জুলাইয়ে নটিংহ্যামশায়ারের বিপক্ষে ইয়র্কশায়ারের বাঁহাতি স্পিনার হেডলি ভেরিটি যা করেছিলেন, সেটাকে এককথায় বলা যায় অবিশ্বাস্য। বোলিং ফিগারটা একবার দেখুন, চোখ দুটোকে সামলে রাখুন, কপালে উঠে যেতে পারে। ১৯.৪-১৬-১০-১০, মানে ১০ রানে ১০ উইকেট! অনুমান করার জন্য কোনো পুরস্কার নেই, এটাই প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে সেরা বোলিং। ঢেকে রাখা উইকেট, বিশ্বজুড়ে ব্যাটিং উইকেটের ছড়াছড়ি, টেলএন্ডারদের ব্যাটিংপ্রীতি—সব মিলিয়ে হেডলির রেকর্ড কেউ কেড়ে নেবে, ভাবলেও হাস্যকার লাগে!
রো-র ‘ডাবল’ অভিষেক
১৩৪ বছর আর ১৯৯১টি ম্যাচের টেস্ট ইতিহাসে অভিষেক টেস্টের দুই ইনিংসেই সেঞ্চুরি পেয়েছেন মাত্র দুজন। এঁদের মধ্যে একজন আবার করেছেন ডাবল সেঞ্চুরি আর সেঞ্চুরি। ১৯৭২ সালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে কিংস্টন টেস্টে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ওপেনার লরেন্স রোর এই কীর্তির কাছাকাছি যেতে পেরেছিলেন কেবল একজনই। ২০০৩ সালে অভিষেকে বাংলাদেশের বিপক্ষে ১৭০ ও ১০৫ করেছিলেন পাকিস্তানের ওপেনার ইয়াসির হামিদ। অভিষেকে সেঞ্চুরিটাই তো বিশাল অর্জন। সেখানে দুই ইনিংসেই সেঞ্চুরি, একটি আবার ডাবল—একটু বেশিই বেশি!
No comments:
Post a Comment