কারিনা-প্রিয়াঙ্কা
উত্তর: ও! আমি ভেবেছি, আপনি অভিনেত্রীদের কথা জানতে চাইছেন!!!
প্রশ্নোত্তর পর্বটি আরও চার বছর আগের। কচি খোকাদেরও বুঝতে বাকি ছিল না, ক্যাটরিনা-প্রিয়াঙ্কাদের অভিনেত্রীই মনে করতেন না কারিনা। সাক্ষাৎকারটি পড়ে সে সময় ভীষণ কষ্ট পেয়েছিলেন প্রিয়াঙ্কা চোপড়া। তবে সাবেক বিশ্বসুন্দরী ইটের মার খেয়ে বসে থাকেননি। পাটকেলটি ঠিকই ছুড়ে দিয়েছিলেন কাপুরকন্যার কোর্টে। তাঁর কাছে একবার সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, তাশান ছবিতে কারিনা কাপুরকে দেখে তো অনেকেই অনুপ্রাণিত হচ্ছেন, সাইজ জিরো ফিগারের ব্যাপারে। প্রিয়াঙ্কার এ ব্যাপারে ভাবনা কী? তিনিও নিশ্চয় একই জোয়ারে গা ভাসাবেন? ‘অবশ্যই না। সাইজ জিরো ফিগারের চক্করে অনেকেই নিজেদের চেহারার লাবণ্যতা হারিয়েছেন। আমি এতটা বোকা নই যে এই জোয়ারে গা ভাসাব।’ প্রিয়াঙ্কার মন্তব্য শুনে স্বাভাবিকভাবেই কারিনা কাপুর তেলে-বেগুনে জ্বলে ওঠেন। দুই নায়িকার মধ্যে চুলোচুলি হবে—এটাই যেন নিয়ম। তবে এই জমানার কারিনা-প্রিয়াঙ্কা অতীতের সব যুদ্ধকেই ছাপিয়ে যাচ্ছেন। এই তো, অতিসম্প্রতি করণ জোহরের টক শোতে কারিনাকে প্রশ্ন করেন করণ, প্রিয়াঙ্কা চোপড়ার সঙ্গে দেখা হলে কী জানতে চাইবেন? উত্তর নিয়েই যেন বাড়ি থেকে এসেছিলেন কারিনা। ঝটপট উত্তর দেন—আমি জানতে চাইব, ও এ রকম উদ্ভটভাবে কথা বলা কোত্থেকে শিখল? নিজ দায়িত্বে একই টক শোতে প্রিয়াঙ্কার কাছে কারিনার প্রশ্ন পৌঁছে দেন করণ। প্রিয়াঙ্কার উত্তর, সে কী! কারিনা জানে না? ওর বয়ফ্রেন্ড (সাইফ) যেখান থেকে শিখেছে (বোস্টন), আমিও সেখান থেকেই শিখেছি। যুদ্ধটা আরেকটু উসকে দিতে করণ পাল্টা প্রশ্ন ছোড়েন, যদি কারিনার কম্পিউটার থেকে কিছু চুরি করার দায়িত্ব দেওয়া হয়, প্রিয়াঙ্কা কী চুরি করবেন? প্রশ্ন শুনে প্রিয়াঙ্কার মুখে তাচ্ছিল্যের হাসি। পরক্ষণেই উত্তর, আরে বাবা, আগে নিশ্চিত হন, কারিনার কি আদৌ কম্পিউটার আছে? আমার তো মনে হয় না! হা হা হা!
...অতঃপর যুদ্ধ আরও ঘনীভূত হলো! অথচ একদা ওদেরই ছিল স্বপ্নের দিন। তৎকালীন প্রেমিক শহীদ কাপুরকে নিয়ে কারিনা এবং তৎকালীন প্রেমিক হারমান বেওয়েজাকে নিয়ে প্রিয়াঙ্কা ছবি দেখা, রেস্তোরাঁয় ঢুঁ মারা—সব আমোদ-ফুর্তিই করতেন। একসঙ্গে পেপসির বিজ্ঞাপনচিত্র করেছিলেন। এমনকি বন্ধুত্বের নিদর্শন দেখাতে শাহরুখ খানের কৌন বনেগা ক্রোড়পতি শোতে একসঙ্গে হাজিরাও দিয়েছিলেন। অথচ আজ? শাহরুখ খানকে মধ্যস্থতা করতে হয় এই দুই সুন্দরীর ঝগড়া থামাতে। গত মাসেরই কথা। একটি পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানের মহড়ায় অংশ নেওয়ার কথা ছিল কারিনার। কারিনা তখনো স্টুডিওতে এসে পৌঁছাননি। প্রিয়াঙ্কা সময়মতো হাজির হওয়ায় নৃত্য পরিচালকের কাছে মহড়া শুরু করার অনুরোধ করেন। সবকিছু ঠিকমতোই চলছিল। কিন্তু কাপুরকন্যা আসাতেই বাধে বিপত্তি। প্রিয়াঙ্কাকে বাদ দিয়ে নৃত্য পরিচালকের কারিনাকে সময় দিতে হবে। কারণ, তাঁর বাড়ি যাওয়ার তাড়া! প্রিয়াঙ্কাও নাছোড়বান্দা। তিনিও নৃত্য পরিচালককে ছাড়বেন না। এরপর যে তামাশা হয়, তার জন্য তৈরি ছিলেন না কেউই। প্রথমবার জনসমক্ষে দুই নায়িকা কথার যুদ্ধে নেমে পড়েন। দুই নায়িকার আইডল শাহরুখ খান সে সময় উপস্থিত না থাকলে লঙ্কাকাণ্ড ঘটে যেতে পারত। শাহরুখের সঙ্গে দুই নায়িকার হাতেই ছবি আছে। কারিনা-শাহরুখের রা ওয়ান মুক্তি পাবে দিওয়ালিতে, প্রিয়াঙ্কা-শাহরুখের ডন টু মুক্তি পাবে বড়দিনে। ডন-এ কারিনা আইটেম গানে অংশ নিলেও ডন টুতে তিনি থাকছেন না। কারণ, ডন করে খুব একটা লাভ হয়নি। এমনকি ২০০৪ সালে অ্যাইতরাজ ছবিতে প্রধান নায়িকা চরিত্রে কাজ করেও কারিনা খুব একটা সফল হননি। খলচরিত্রে কাজ করে জনপ্রিয়তা, পুরস্কার সবই বাগিয়ে নিয়েছিলেন প্রিয়াঙ্কা। বিজ্ঞদের ধারণা, যুদ্ধের সূত্রপাত তখন থেকেই।
তবে এটা ঠিক, কারিনা-প্রিয়াঙ্কার দ্বৈরথ যতই গভীর হোক, দুজনের মধ্যে অন্ত্যমিলও আছে বেশ। ২০০০ সালেই দুজন তারকাখ্যাতি পান। কারিনা অভিনেত্রী হিসেবে বলিউডে পা রাখেন, প্রিয়াঙ্কা চোপড়া বিশ্বসুন্দরীর মুকুট পরে শোবিজ দুনিয়ায় যাত্রা শুরু করেন। কারিনার প্রথম ছবি রিফিউজির মতো প্রিয়াঙ্কার প্রথম ছবি দ্য হিরোও (২০০৩) বক্স অফিসে মুখ থুবড়ে পড়ে। হারমান বেওয়েজার প্রথম ছবি লাভ স্টোরি ২০৫০ কারিনা ছেড়ে দিয়েছিলেন, প্রিয়াঙ্কা গ্রহণ করেছিলেন। প্রিয়াঙ্কার ছেড়ে দেওয়া ওমকারা করে কারিনা পেয়েছিলেন ফিল্মফেয়ার সমালোচক পুরস্কার। ওদিকে কারিনার ছেড়ে দেওয়া ফ্যাশন করে প্রিয়াঙ্কা পেয়েছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারসহ বলিউডের সব কটি পুরস্কার। পারিশ্রমিক ও জনপ্রিয়তার অঙ্কে কারিনাকে অনেকে এগিয়ে রাখতে চাইবেন, তবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের মতো বড় ছক্কা কিন্তু প্রিয়াঙ্কাই পিটিয়েছেন। বাস্তব জীবনেও কারিনার অতীত শহীদ কাপুর এখন প্রিয়াঙ্কার বর্তমান। কারিনার তো শহীদের সঙ্গে কাজ করার প্রশ্নই ওঠে না। পাশাপাশি প্রেমিক সাইফ আলী খানকেও প্রিয়াঙ্কার সঙ্গে কাজ করতে দিচ্ছেন না কারিনা। রেস টুতে যে কারণে প্রিয়াঙ্কাকে বাদ দিয়ে সাইফের বিপরীতে সোনাক্ষীকে নিতে হয়েছে। সব মিলিয়ে বলা যায়, কারিনা-প্রিয়াঙ্কা অঙ্ক দিন দিন জটিল হচ্ছে। এই অঙ্কের শেষ কোথায়, কেউ তা জানে না!
রুম্মান রশীদ খান
সূত্র: ওয়েবসাইট
No comments:
Post a Comment