CRICKET LIVE STREAMING

Saturday, February 19, 2011

আইসিসি ব্যবসাটা ভালোই বোঝে


জিয়াউদ্দিন সাইমুম
বিংশ শতকের শুরুতেই দক্ষিণ আমেরিকার একজন প্রখ্যাত ক্রীড়া সাংবাদিক লিখেছিলেন, ফুটবলের জন্ম ‘সুন্দরের বন্দরে’। কিন্তু ওটা এখন ‘শুল্ক বন্দরে’ নোঙর গেড়েছে। ফুটবলের বাণিজ্যিকায়নের বিপদ তিনি তখনই টের পেয়েছিলেন। কিন্তু ক্রীড়ার পথচলা ঠিকই এগিয়ে গেছে। তবে এটা রীতিমত পণ্যে পরিণত হয়েছে। ফিফা যেমন করে ব্যবসা বুঝে ফেলেছে, আইসিসিও পেছনে থাকতে রাজি হচ্ছে না। তারা তাদের মাল্টি-বিলিয়ন ডলারের ব্যবসাকে যে কোনো নিরাপদ রাখতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করছে। ছোট দলগুলো খেললে আয় কম হবে। তাই ছোট দলগুলোকে ছেঁটে ফেলতে তারা মরিয়া।
ভারতের কথাই ভাবুন। কোয়ার্টার ফাইনাল নিশ্চিত করতে পারলেই ক্রিকেটের এ পরাশক্তিকে আর কোনো ম্যাচই বিদেশের মাটিতে খেলতে হবে না। এ সুযোগ কিন্তু বিশ্বকাপের বাকি দুটো দেশের জন্য নিশ্চিত করা হয়নি। ভারতের মাটিতে ভারতকে খেলার সুযোগ দিলে বিজ্ঞাপন বাবত যে পরিমাণ ডলার আইসিসির অ্যাকাউন্টে জমা হবে, সেই পরিমাণ ডলারের নিশ্চয়তা বাংলাদেশ আর শ্রীলঙ্কার পক্ষে দেয়া মোটেও সম্ভব নয়। বিশেষ করে আইপিএল বিশ্ব ক্রিকেটের নগদপ্রাপ্তি সব হিসাব-নিকাশকে একেবারে পাল্টে দিয়েছে। জাগতিক জ্ঞানটা বেশ টনটনে বলেই আইসিসি সুযোগটা ছাড়বে কেন?
গত শুক্রবার সব ধরনের জল্পনার অবসান ঘটিয়ে মিরপুরে আইসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হারুন লোগাত সাংবাদিকদের স্পষ্ট ভাষায় বলে দিয়েছেন, কোয়ার্টার ফাইনালের টিকিট নিশ্চিত করতে পারলেই ভারতকে আর বিদেশের মাটিতে খেলতে হবে না। নিজেদের মাটিতে তারা বাকি সব ম্যাচ খেলার সুযোগ পাবে। অর্থাত্ শিডিউলে পরিবর্তন আসবে।
হারুন লোগাত বিষয়টির বিস্তারিত ব্যাখ্যা দিয়ে এটাও বলেন, কোয়ার্টার ফাইনালে স্বাগতিক দুটি দেশকে একে অন্যের মুখোমুখি দাঁড়াতে হয়, তাহলে ম্যাচটি হবে বিশ্বকাপের আগে যে দেশটি বাছাই বা র্যাংকিংয়ে এগিয়ে ছিল, সেই দেশের হোম গ্রাউন্ডে ম্যাচটি অনুষ্ঠিত হবে। আপাতদৃষ্টিতে এটা আইসিসির নির্দোষ সিদ্ধান্ত হলেও মোটেও পক্ষপাতশূন্য সিদ্ধান্ত নয়। কারণ আইসিসি র্যাংকিংয়ে শ্রীলঙ্কা আর বাংলাদেশের চেয়ে ভারতই এগিয়ে রয়েছে। আইসিসির এই সিদ্ধান্তের সহজ-সরল তরজমা হচ্ছে, প্রাথমিক পর্বের বাধা ডিঙাতে পারলে নকআউট পর্বের ম্যাচ খেলতে ভারতকে আর বিদেশের মাটিতে মোটেও ছুটতে হবে না।
আগের শিডিউল অনুসারে কোয়ার্টার ফাইনালের ম্যাচগুলো হওয়ার কথা ছিল এভাবে : ‘এ’ গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন বনাম ‘বি’ গ্রুপের চার নম্বর দল (মিরপুর), ‘এ’ গ্রুপের রানার্স আপ বনাম ‘বি’ গ্রুপের তিন নম্বর দল (আহমেদাবাদ), ‘এ’ গ্রুপের তিন নম্বর দল বনাম ‘বি’ গ্রুপের রানার্স-আপ দল (মিরপুর) এবং ‘এ’ গ্রুপের চার নম্বর দল বনাম ‘বি’ গ্রুপের চ্যাম্পিয়ন দল (কলম্বো)।
কিন্তু আইসিসির বাণিজ্যিক সিদ্ধান্তের পর ‘বি’ গ্রুপের যেখানেই থাকুক না কেন, ভারত তার কোয়ার্টার ফাইনাল ম্যাচ খেলবে আহমেদাবাদে। এক্ষেত্রে আগামী ২৪ মার্চের কোয়ার্টার ফাইনালে ‘বি’ গ্রুপের তৃতীয় স্থান দখলকারী দলটি খেলবে ‘এ’ গ্রুপের রানার্সআপ দলটির বিপক্ষে।
ভারত যদি ‘বি’ গ্রুপে রানার্সআপ হয়, তাহলে তারা খেলবে ‘এ’ গ্রুপের তিন নম্বর দলের বিপক্ষে। ভারত যদি প্রাথমিক পর্বের ম্যাচে তৃতীয় স্থান দখল করতে না পারে, তাহলেও তারা আহমেদাবাদেই খেলবে। ভারত তাদের সৌভাগ্যের কথাটি বিশ্বকাপে তাদের প্রথম ম্যাচ শুরুর আগেই জেনে গেছে। কিন্তু তাদের প্রতিপক্ষকে এটা জানতে আগামী ২০ মার্চ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।
অন্যদিকে ভারতের মুখোমুখি না হতে হলেই কেবল শ্রীলঙ্কা আগামী ২৬ মার্চ নিজেদের মাটিতে শেষ-আটের ম্যাচ খেলার সুযোগ পাবে। এক্ষেত্রে ভারত টুর্নামেন্ট শুরুর আগে তাদের র্যাংকিংকে কাজে লাগিয়ে আহমেদাবাদে খেলার সুযোগ পাবে। একইভাবে স্বাগতিক বাংলাদেশও আগামী ২৩ অথবা ২৪ মার্চ বাংলাদেশের মাটিতে কোয়ার্টার ফাইনাল ম্যাচ খেলার সুযোগ পাবে। কিন্তু এই পর্বে তাদের প্রতিপক্ষ যদি ভারত অথবা শ্রীলঙ্কা হয়ে যায়, তাহলে বাংলাদেশ নিজের মাটিতে ম্যাচটি খেলার সুযোগ পাবে না। আইসিসির ব্যবসায়িক নীতিতে দুর্বল দলের কোনো জায়গা নেই। কারণ বাণিজ্যই যেখানে বড় কথা, সেখানে দুর্বল পৃষ্ঠপোষকতা পাবে কী করে?
হারুন লোগাত এখানেই থামেননি। তিনি সাফ বলে দিয়েছেন, ২০১৫ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপে দুর্বল দলগুলো অংশ নেয়ার সুযোগ পাবে না। আগামী বিশ্বকাপে ১৪ দলের পরিবর্তে ১০টি দল খেলবে। তবে টি-২০ বিশ্বকাপে ১২ দলের পরিবর্তে ১৬টি দল খেলবে।

No comments:

Post a Comment

kazi-music