CRICKET LIVE STREAMING

Friday, October 29, 2010

৫ নায়িকাসহ এক ডজন গ্ল্যামার গার্লের ইয়াবা কানেকশন শানু ময়ূরী, কেয়া, একা ও ঊর্মি

চলচ্চিত্রের পাচ নায়িকাসহ শোবিজের অন্তত এক ডজন গ্ল্যামার গার্ল ইয়াবা কেলেঙ্কারিতে ফেসে যেতে পারে। ভয়াবহ এ নেশায় আসক্তদের তালিকায় চলচ্চিত্রের নায়ক, প্রযোজক ও পরিচালকদের নামও রয়েছে। তাদের ওপর চলছে কড়া গোয়েন্দা নজরদারি। হালের আলোচিত একাধিক মডেল কাম অভিনেত্রী ও সঙ্গীতশিল্পী নিয়মিত ইয়াবা সেবন করে বলে নিশ্চিত হয়েছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের কর্মকর্তারা।

এদিকে ইয়াবা ব্যবসা ও নগ্ন ছবি তুলে ব্ল্যাকমেইলের চেষ্টার অভিযোগে গ্রেফতার হওয়া চিত্র নায়িকা শানু ইয়াবা কানেকশনে জড়িত শোবিজের অনেকেরই নাম ফাস করে দিয়েছে। প্রকাশ করেছে ইয়াবা ব্যবসার অন্তরালে থাকা নানা কাহিনী। অন্যদিকে ইয়াবা, হেরোইন ও নগদ টাকাসহ গ্রেফতার হওয়া মডেল পায়েল ও রুবিকে রিমান্ডে নেয়া হয়েছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদেই পায়েল ফাস করে দিয়েছে অন্ধকার জগতের নানা চাঞ্চল্যকর তথ্য। শোবিজের কারা ইয়াবা গ্রাহক- সে কথা যেমন বলেছে, তেমনি নিজের অন্ধকার জীবনের কথাও বলেছে খোলামেলাভাবে।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের এক কর্মকর্তা জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পায়েল অন্তত এক ডজন তারকার নাম বলেছে। তাদের বেশির ভাগই অশ্লীল ছবির নায়ক-নায়িকা। পায়েল বলেছে, গ্রেফতার হওয়া নায়িকা শানুর জলসাঘরের অতিথি হতেন এসব তারকা। সেখানে যাতায়াত করতেন ধনাঢ্য শিল্পপতি ও ব্যবসায়ীরা। নায়িকাদের সঙ্গে অভিসারের আগেই চুপিসারে ব্যবসায়ীদের সেবন করানো হতো ইয়াবা। এক পর্যায়ে ইয়াবায় আসক্ত হয়ে একাধিক ব্যবসায়ী শানুর জলসাঘরের খদ্দের বনে যান। ইয়াবা কানেকশনে জড়িত চলচ্চিত্রের অশ্লীল নায়িকা হিসেবে পরিচত ময়ূরী, কেয়া, একা ও ঊর্মির নাম প্রকাশ করে শানু বলেছে, চিত্রনায়ক আলেকজান্ডার বো, মেহেদীসহ কয়েকজন পরিচালক-প্রযোজক তার জলসাঘরের নিয়মিত অতিথি ছিলেন। গ্রেফতার হওয়া যুবক জামালকে শানু তার স্বামী বলে পরিচয় দিলেও পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে এক ফ্ল্যাটে বাস করলেও জামাল তার স্বামী নয়। তারা দুজনে লিভ টুগেদার করতো। একই সঙ্গে নানা কৌশলে ব্যবসায়ীদের শানুর ফ্ল্যাটে নিয়ে যেতো। এরপর শানুর সঙ্গে নগ্ন ছবি তুলে ব্যবসায়ীদের ব্ল্যাকমেইল করে মোটা অঙ্কের টাকা আদায় করা হতো।

জিজ্ঞাসাবাদে শানু বলেছে, গুলশান, বনানী, উত্তরাসহ অভিজাত এলাকায় ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে গড়ে তোলা হয় জলসাঘর। সেখানে যৌন ব্যবসার পাশাপাশি চলে ইয়াবা ব্যবসা। এসব জলসাঘরের মূল আকর্ষণ থাকে শোবিজের নায়িকা ও প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির সুন্দরী ছাত্রীরা। সেখানে ইয়াবাসহ নানান মাদক বিক্রি হয়। সুন্দরী নারীর টানে ওইসব জলসাঘরে গিয়েই দ্বিমুখী নেশায় আসক্ত হচ্ছে তরুণ সমাজ। উল্লেখ্য, নগ্ন ছবি তুলে ব্ল্যাকমেইল চেষ্টার অভিযোগে ৭ নভেম্বর নায়িকা শানু ও তার বয়ফ্রেন্ড জামালকে পুলিশ গ্রেফতার করে। এরপর তাকে জিজ্ঞাসাবাদে ইয়াবা কানেকশনসহ নানান তথ্য বেরিয়ে আসে।

এদিকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে মডেল পায়েল শোবিজে তার উত্থান ও ইয়াবা ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ার নানা কথা অকপটে স্বীকার করেছে। পায়েল বলেছে, সমাজের ভালো মানুষের মুখোশধারী ধনাঢ্য ব্যক্তিদের শয্যাসঙ্গী হওয়ার বিনিময়ে নাম লিখিয়েছে মডেলের তালিকায়। এতে তার সহযোগী ছিল চলচ্চিত্র অভিনেত্রী ও পায়েলের ননদ শানু। ননদ-ভাবির নানা কাহিনী বেরিয়ে এসেছে পায়েলের মুখ দিয়ে। মানিকগঞ্জের দরিদ্র পরিবারের সন্তান পায়েল। লেখাপড়ার দৌড় এইচএসসি পর্যন্ত। ঘটনাচক্রে আট বছর আগে পরিচয় হয় চলচ্চিত্র অভিনেত্রী শানুর বড় ভাইয়ের সঙ্গে। তাদের বিয়েও হয়। একটি ছেলেও আসে সংসারে। পায়েল আকর্ষণীয় চেহারার অধিকারী হওয়ায় স্বামী তাকে মডেল বানানোর উদ্যোগ নেয়। একসময় পায়েল স্ট্যান্ডার্ড লুঙ্গির মডেল হওয়ার সুযোগ পায়। পায়েলের দাবি, ওই বিজ্ঞাপন থেকে সে ২৫ হাজার টাকা পেয়েছিল। এরপর স্বামী পায়েলকে দিয়ে শুরু করে ভিন্ন ব্যবসা।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের কর্মকর্তাদের কাছে পায়েল জানিয়েছে, স্বামী আর ননদ মিলে তাকে অভিজাত এলাকার আলো ঝলমলে পার্টিতে যেতে বাধ্য করতো। পার্টিতে যাওয়ার পর পায়েল হারিয়ে যেতো আলো-আধারির খেলায়। এর বিনিময়ে পায়েলের স্বামী হাতিয়ে নিতো মোটা অঙ্কের টাকা। এভাবে টাকা উপার্জন করলেও সে টাকা পায়েলের কপালে জোটেনি। কয়েক বছর আগে তার স্বামী সব টাকা আত্মসাৎ করে পাড়ি জমায় আমেরিকায়। সেখানে গিয়ে পাঠিয়ে দেয় ডিভোর্স লেটার। এরপর পুরোপুরি অন্ধকার পথেই এগিয়ে যায় পায়েল। বেশ কিছু দিন আগে দেলোয়ার নামে এক বেকার যুবককে ফের বিয়ে করে সে।

ফুল টাইম ইয়াবা ব্যবসায় জড়ানোর বিষয়ে পায়েল জানায়, বছরখানেক আগে তার পরিচয় হয় জাহানারা আক্তার রুবির সঙ্গে। রুবিই তাকে ইয়াবা ব্যবসার পথ দেখায়। রুবি পায়েলকে শোবিজে ইয়াবা বিক্রি করতে উৎসাহিত করে। এরপর শোবিজে ইয়াবা সাপ্লাই দেয়ার দায়িত্ব নেয় পায়েল। এ জন্য রুবি তাকে প্রতিদিন ১ হাজার টাকা দিতো। ডিলারদের কাছ থেকে ইয়াবা নিয়ে সেগুলো তার কাছে পৌছে দিতো রুবি। এরপর পায়েলের হাত হয়ে তা পৌছে যেতো শোবিজ তারকাদের হাতে।

জিজ্ঞাসাবাদে ইয়াবার সেবনকারী রুপালি ও ছোট পর্দার অনেক তারকার নাম বলেছে পায়েল। দিয়েছে সঙ্গীতশিল্পীদেরও একটি তালিকা। এ সংখ্যা এক ডজনেরও বেশি। তারা পায়েলের কাছ থেকে নিয়মিত ইয়াবা নিয়ে সেবন করতো। পায়েল জানিয়েছে, অনেক তারকা ঢাকার বাইরে কক্সবাজারসহ বিভিন্ন স্পটে শুটিংয়ে গেলেও পায়েলকে ফোন করে ওইসব এলাকায় নিয়ে যেতো শুধু ইয়াবার জন্য। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের এক কর্মকর্তা জানান, পায়েল ইয়াবা সেবনকারী হিসেবে শোবিজের হার্টথ্রব নায়ক-নায়িকাদের নামও বলেছে। এর মধ্যে রয়েছে একটি মোবাইল কম্পানির জনপ্রিয় বিজ্ঞাপনের এক সুদর্শন মডেল কন্যা, জনপ্রিয় একজন মডেল কাম অভিনেত্রী, যিনি ব্যাচেলর ছবি করে প্রশংসিত হয়েছেন। জনপ্রিয়তার শীর্ষে থাকা রুপালি পর্দার দুজন অভিনেত্রীর নামও বলেছে পায়েল। তাদের মধ্যে একজন সমপ্রতি দাম্পত্য জীবনে প্রবেশ করেছেন। দুজন কণ্ঠশিল্পী আছেন যারা হালে তরুণ-তরুণীদের মধ্যে খুবই জনপ্রিয়। একজন মহিলা কণ্ঠশিল্পীর নামও বলেছে পায়েল। যিনি আরেক সঙ্গীতশিল্পীর সাবেক স্ত্রী। তাদের ওপর মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের কর্মকর্তারা নজরদারি করছেন। এছাড়াও পায়েল অন্তত ৮ থেকে ১০ জন ডিলারের নাম বলেছে। অধিদফতরের এক কর্মকর্তা জানান, স্টেডিয়াম এলাকার লাগেজ পার্টির এক সদস্য নিয়মিত থাইল্যান্ড যাওয়া-আসা করে এবং সেখান থেকে সরাসরি ইয়াবা নিয়ে আসে। বেশ কিছু বিমানবালা তাকে সহযোগিতা করে বলে গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন। মগবাজারের রেকর্ডিং স্টুডিওর এক মালিকও ইয়াবার ডিলার। তাদের গ্রেফতার করতে গত দুই রাত একাধিক স্থানে অভিযান চালিয়েও ব্যর্থ হয়েছে গোয়েন্দারা।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, পায়েলের দেয়া এসব তথ্য যাচাই-বাছাই করে নিশ্চিত হওয়ার আগে কারো বাসায় অভিযান চালানো হবে না। তবে পায়েল যাদের নাম বলেছে তারা সবাই নিজ নিজ ভুবনে প্রতিষ্ঠিত। পায়েল নিজেকে আড়াল করতে তাদের নাম বলছে কি না সে বিষয়টিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

সূত্রঃ যায়যায়দিন।

No comments:

Post a Comment

kazi-music