নাটক-টেলিফিল্মের এ কী দশা!
আহমদ বাসির
পল্টিবাজ, পাঙ্খা, লস্ট অ্যান্ড ফাউন্ড, ওল্ড ইজ গোল্ড, ক্লিক ক্লিক, প্রেসক্রিপশন, পয়েন্ট থ্রি, অল দ্য বেস্ট, ...এই গল্পের নাম কি?, সুপাত্রের সন্ধানে, সার্ভিস হোল্ডার, আর যাবো না এভারেস্ট, পাত্র চাই না, আরমান ভাই কয়া পারছে, লিটল অ্যাঞ্জেল আই অ্যাম ডাইং, ঝগড়ালি, বেড়ায় খেত খায়, স্পেশাল গেস্ট, কাঁচা গাব পাকা গাব, আই লাভ ইউ মি টু, আই লাভ ইউ তিনটি কারণে, কন্যাদায় বনাম কন্যার দায়, লাঞ্চ দেন সাফার—এগুলো পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে টিভি অনুষ্ঠানমালায় প্রচারিত কয়েকটি নাটক ও টেলিফিল্মের নাম। এ বছর বিটিভিসহ দশটি চ্যানেলে প্রায় দুশ’ নাটক ও টেলিফিল্ম প্রচারিত হচ্ছে। এগুলোর মধ্যে বেশিরভাগই ধারণ করেছে এ রকম নাম।
নাটক ও টেলিফিল্মগুলোর নামের দিকে একটু দৃষ্টি দিলেই বুঝতে অসুবিধা হয় না সৃষ্টিশীলতা কতটা অবরুদ্ধ হয়ে আছে, শিল্পমান কতটা নিম্নগামী হয়ে পড়ছে। সৃষ্টিশীলতা ও শিল্প চেতনার এই বেহালদশা কেন? এ প্রশ্ন এখন অনেক শিল্পরুচিসম্পন্ন দর্শকের। কেননা, নাটক হোক কিংবা টেলিফিল্ম—নামই বলে দেয় তা কতটা মানসম্পন্ন। একজন লেখক, নাট্যকার, চিত্রনাট্যকার কিংবা পরিচালক তার নাটক কিংবা টেলিফিল্মের এহেন নামকরণ কেন করেন? তাদের ভাণ্ডারে নিশ্চয় আইডিয়ার অভাব আছে, অভাব আছে শব্দেরও। ফলে ইংরেজি-বাংলা মিলিয়ে যার মাথায় যেটা আসছে সেটা দিয়েই কোনোরকম নামকরণ করে দিচ্ছেন। তারা হয়তো ভাবছেন শিল্পজ্ঞানহীন সাধারণ দর্শক এসব নামেই আকৃষ্ট হয়, কিন্তু তারা আদৌ তলিয়ে দেখেন না, এরকম চিন্তা দর্শকদের কেবল ঠকিয়েই থাকে। ফলে অনেক সাধারণ দর্শককেও দেখা যায় হাসি-তামাশা আর প্রেম-ভালোবাসার কৈশরক হ্যাংলামির কারণে ধ্যেত্, ধূর, দূর, ধুত্তুরি—এসব শব্দ ব্যবহার করতে। কাঁচাবাজার থেকে শুরু করে টিভি চ্যানেল পর্যন্ত সর্বত্রই যে ঈদকে বাণিজ্যিকীকরণ করা সম্পন্ন হয়েছে তারই উত্কৃষ্ট নমুনা এসব নাটক ও টেলিফিল্ম। না আছে এসবে গল্পের কোনো নতুনত্ব, অভিনবত্ব আর না আছে নামকরণের কোনো চমক।
একজন দর্শক একটি নাটক কিংবা টেলিফিল্ম দেখে জীবনযাপনের নতুন কোনো অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হতে চান, নতুন কোনো জ্ঞান বা অভিজ্ঞান তার মধ্যে প্রবেশ করে। এভাবেই দর্শক সমৃদ্ধ হন। এজন্য আমাদের ইতিহাস ঘাঁটাঘাঁটির প্রয়োজন হয় না। সুদূর অতীতের দিকেও হাত বাড়াতে হয় না বরং নব্বইয়ের দশকজুড়ে বাংলাদেশ টেলিভিশনে প্রচারিত একক ও ধারাবাহিক নাটকগুলোর কথা বলাই যথেষ্ট। ওই সময় এমন সব মানসম্পন্ন-গুণসম্পন্ন নাটক তৈরি ও প্রচার হয়েছে যেগুলোর কথা এখনও মানুষের মুখে মুখে ফেরে। কিন্তু স্যাটেলাইট মিডিয়ার আগমনের পর থেকে শুরু হয়েছে গুণ ও মানের পতন। পতন অবশ্য সর্বার্থে ঠিক নয়। অনেক গুণী নাট্যকার ও নির্মাতা আছেন যারা তাদের কাজের ব্যাপারে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। ফলে এই ঈদে প্রচারিত প্রায় দুশ’ নাটক-টেলিফিল্মের মধ্যে অনেক নাটক-টেলিফিল্ম আছে যেগুলো গুণে-মানে অনন্য। কিন্তু সংখ্যায় তুলনামূলক অনেক কম।
নাটক-টেলিফিল্মের এ দূরবস্থা যে জাতীয় মননে বড় ধরনের সঙ্কট সৃষ্টি করছে—এদিকে কারোরই খেয়াল নেই। টিভি চ্যানেলগুলো ইচ্ছা করলেই এগুলো নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। মানের ব্যাপারে আপসহীন হতে পারে তারা। প্রয়োজনে প্রচার সংখ্যা কমিয়েও দিতে পারে নাটক-টেলিফিল্মের।
No comments:
Post a Comment