CRICKET LIVE STREAMING

Monday, September 27, 2010

asif akbar biday

কেন বিদায় নিচ্ছেন আসিফ

কয়েক মাস আগে চলচ্চিত্রে গান গাওয়া ছেড়েছেন আসিফ। এবার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন অডিও অ্যালবামের জন্যও আর গাইবেন না। শুধুই কনসার্টে সঙ্গীত পরিবেশন করবেন। কেন বিদায় নিচ্ছেন আসিফ? তার সঙ্গে কথা বলে সেই প্রশ্নেরই উত্তর খুঁজেছে নন্দন। লিখেছেন জনি হক ও শিমুল আহমেদ
আসিফকে কোথাও পাওয়া যাচ্ছে না! তার মুঠোফোনও বন্ধ। স্ত্রী মিতুর কাছে জানা গেল, তিনি কুমিল্লায়। এদিকে সবখানে রটে গেছে, গানপাগল এই মানুষটি নাকি গান ছেড়ে দিচ্ছেন! দেশীয় সঙ্গীতাঙ্গনের বিস্ময়কর এক খবর। বিকেলে তার মুঠোফোন চালু হলো। কথাও হলো। জানালেন, গান ছাড়ছি না, তবে আগামী সেপ্টেম্বরের পর থেকে নতুন কোনো অ্যালবামের জন্য আর গাইব না। গত এক বছর ধরে অনেক ভেবে এই সিদ্ধান্তে পেঁৗছেছেন তিনি। আলোচনা করেছেন মা, পরিবার ও স্ত্রীর সঙ্গে। আনুষ্ঠানিকভাবে গত ১৬ মার্চ বিকেলে সেকথাই জানালেন আসিফ। মনে পড়ছিল তার দ্বিতীয় একক 'তুমি সুখী হও' [২০০১] অ্যালবামের একটি গানের কথা। রাজেশের কথা ও সুর করা গানটি হলো_ 'যেতে চাইলে কাউকে ধরে রাখা যায় না, মন ছুটলে তাকে আর ফেরানো যায় না, আমাকে ভুলে যদি সুখে থাকা যায়, বন্ধু তোমাকে জানাই বিদায়।' এ বক্তব্যই যেন বাস্তবায়ন করলেন শিল্পী। কিন্তু ভক্তরা তাকে বিদায় জানাবে না। এটা হলফ করেই বলে দেওয়া যায়। তবে আসিফের ভাষ্য, 'কই গান তো ছেড়ে দিচ্ছি না! কনসার্টে নিয়মিত গাইব। গানের জন্য অনেক যুদ্ধ করেছি। কিন্তু শিল্পীদের অধিকার আদায় করতে পারিনি। তাই নিজেই গান ছেড়ে দিয়ে প্রতিবাদ জানালাম।'
আসিফের এই যুক্তি কতটুকু সঠিক, তা নিয়ে ভাবা প্রয়োজন। মানুষ হিসেবে তার মনোবল সবসময়ই দৃঢ়। এমন একজনের কাছে এমন একটি সিদ্ধান্ত কেইবা মেনে নিতে পারে! অডিও শিল্পে তার অ্যালবামের বিক্রির পরিসংখ্যান যারা জানেন, তারা একবাক্যে বলে দিতে পারেন, এই সিদ্ধান্ত সঙ্গীতাঙ্গনের জন্য বড় ক্ষতি হয়ে দাঁড়াবে। ২০০১ সালের সেপ্টেম্বরে প্রকাশিত আসিফের প্রথম একক অ্যালবাম 'ও প্রিয়া তুমি কোথায়' এখনও দেশের সর্বাধিক বিক্রীত অ্যালবাম। তারপর নিয়মিতভাবে তিনি ২৮টি একক অ্যালবাম বের করেছেন। উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, সবকটিই প্রকাশকদের প্রত্যাশিত সাফল্য পেয়েছে। আসিফের গাওয়া গান নিয়ে সাউন্ডটেক এ পর্যন্ত ১৯টি একক ও ১০৭টি মিশ্র অ্যালবাম প্রকাশ করেছে। এগুলোর মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটি পেয়েছে ধারাবাহিক সাফল্য।
সঙ্গীত জীবনের ১০ বছরে প্রায় ১ হাজার ৫৫০টি গানে কণ্ঠ দিয়েছেন আসিফ। এর মধ্যে চলচ্চিত্রের গানও আছে। কয়েক মাস আগে অভিমানে ছবির গান গাওয়াও ছেড়েছেন তিনি। এবার অডিওর গানও ছাড়লেন। এই সিদ্ধান্ত কি পরিবর্তন হতে পারে? 'আমি সাধারণ এক তরুণ ছিলাম। গানের মাধ্যমে খ্যাতি পেয়েছি। জীবনে প্রতিষ্ঠা পেয়েছি। গানের নভোযানে চড়ে খ্যাতির মহাকাশে উঠে দেখলাম, নাহ্ পৃথিবীই ভালো! তাই মাটিতে ফিরে এলাম।'
গান ছেড়ে এখন থেকে রাজনীতিতে আরও বেশি সময় দেবেন আসিফ। রাজনীতির পাশাপাশি রেস্তোরাঁ ব্যবসা নিয়েই ব্যস্ত থাকবেন।
আসিফের জীবনের শুরুর দিকটায় চোখ রাখলে মনে হবে তিনি হতে পারতেন ক্রিকেটার। গানের আগে ক্রিকেট নিয়েই সারাবেলা কেটে যেত। ভাগ্যের চাকা তাকে নিয়ে আসে সুরের বৃত্তে। তার কণ্ঠে বেশিরভাগ গানই বিরহের ছবি আঁকে। ভক্তদের কাছে বিরহের গানের সমার্থক হয়ে আছেন আসিফ। গানে গানেই তার সারাজীবন কাটিয়ে দেওয়ার কথা ছিল, কিন্তু অন্যরকম এক ভাবনা সব ওলটপালট করে দিল। সেপ্টেম্বরের আগে কনকচাঁপা ও মুহিনের সঙ্গে দুটি পৃথক অ্যালবামে গাইবেন তিনি। তারপরেই সরে দাঁড়াবেন। ইতি হবে এক নক্ষত্রসম উজ্জ্বল ক্যারিয়ারের। যেখানে শুধুই সাফল্যের গল্পের ছড়াছড়ি। 'ক্রিকেটারদের মতোই চাহিদা থাকতে থাকতে বিদায় নেওয়া ভালো। সেঞ্চুরি করার পরপরই অবসর নেওয়ার আনন্দ অন্য কিছুর সঙ্গে তুলনীয় হতে পারে না। এখনও আমার অ্যালবাম বাজারে মুড়ির মতো বিক্রি হয়। প্রতিদিন ভক্তদের অজস্র ফোন পাই। সবার কাছে আমার এই চাহিদা থাকতে থাকতেই সরে দাঁড়াতে চেয়েছিলাম। সেটাই বাস্তবায়ন করলাম। এবার। আমার জন্য সবাই দোয়া করবেন।'
হ ২১ পৃষ্ঠার পর
আসিফের সিদ্ধান্তে তার ভক্তরা হতাশ। কুমিল্লার ভক্ত সুমন মুঠোবার্তায় বলেছেন, 'আসিফ ভাই আপনার এ সিদ্ধান্তে আমরা শোকাহত, মর্মাহত, আশাহত। আশা করি, আপনি আবার অডিও অ্যালবামে গাইবেন।'
ফরিদপুরের ভক্ত মিজান মুঠোফোনে বলেছেন, 'আপনি কেন গাইবেন না? আমরা তাহলে কার গান শুনব? আপনাকে গাইতে হবে। আমাদের জন্য আপনাকে গাইতেই হবে।'
গত ১৬ মার্চ সংবাদ সম্মেলনে আসিফ যা বলেছেন তার চুম্বক অংশ তুলে ধরা হলো।
...১০ বছর সঙ্গীত জীবন অতিক্রমের পর রাজনীতিতে এসেছি। ২০০১ সালে একটি জাতীয় দৈনিকে আমার এক সাক্ষাৎকারে ছাপা হয়েছিল ১০ বছর গান গেয়ে তারপর রাজনীতিতে সক্রিয়ভাবে অংশ নেব। আজকের এই সিদ্ধান্ত যে ওই খবরের ধারাবাহিকতা, তা কিন্তু নয়। এটাকে কাকতালীয় বলতে পারেন। এ পর্যন্ত আমি ১৬১টি অ্যালবামে গান করেছি। অডিও চলচ্চিত্রের গানসহ প্রায় ১ হাজার ৫৫০টি গান করেছি। আমার ঘাড়ে একটি অস্ত্রোপচার করাতে হবে। সেক্ষেত্রে আমাকে প্রায় ছয় মাস পুরোপুরি বিশ্রামে থাকতে হবে। অডিও অ্যালবামে গানে সময় দিলে সেটা সম্ভব হবে না। সরে দাঁড়ানোর এটাও একটা কারণ।
সত্যি বলতে তারকা হওয়ার পর আমার মনে হয়েছে মঙ্গল গ্রহে ঘুরতে গিয়েছিলাম। এখন আমি পৃথিবীর মানুষ আবার পৃথিবীর বুকে ফিরে আসতে চাই। আগামীতে আমাকে শুধু পাওয়া যাবে কনসার্টে।
আমার এ সিদ্ধান্তে হয়তো ভক্তরা ভীষণ কষ্ট পাবে। কিন্তু কিছুদিন পর তারা এ ঘটনা স্বাভাবিকভাবেই মেনে নেবে। তারা এই ভেবে খুশি হবে যে, আসিফ সিংহের মতো বিদায় নিয়েছে। কারণ এখনও আমার জনপ্রিয়তা অনেক। তারা এমনও বলতে পারে, 'সময় থাকতেই তিনি গান ছেড়ে দিয়েছেন।'
আমি বিশ্বাস করি, আমার ব্যক্তিসত্তাকে বাঁচিয়ে রাখতে অডিও অ্যালবাম থেকে সরে দাঁড়ানো ছাড়া আর কোনো উপায় নেই।
আমার অনেক গান আছে চলচ্চিত্রের কিংবা অডিওর, যেগুলো ভক্তরা হয়তো অনেকেই শোনেনি। তারা যদি সেসব গান শোনে তাহলে তাদের কাছে মনে হবে, সেগুলো নতুন গান।
এখন থেকে রাজনীতিতে আমি নিয়মিত হবো। আমার রাজনৈতিক দল থেকে আয়োজিত বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশ নেবো। রাজনৈতিক অঙ্গনে আমি শক্ত একটি অবস্থান গড়তে চাই। আমি মনে করি, কোনো কোনো ক্ষেত্রে রাজনীতিবিদরা শিল্পীদের চেয়েও জনপ্রিয়।
যে কোনো যুদ্ধের পরে একটি সাংস্কৃতিক বিপ্লব ঘটা দরকার, যেটা আমাদের দেশে হয়নি। আমি দেশব্যাপী একটি সাংস্কৃতিক বিপ্লব ঘটাতে চাই। দলের হয়ে দায়িত্ব নিয়ে দেশের জন্য যেমন কাজ করব, তেমনি সঙ্গীতাঙ্গনের উৎকর্ষেও এগিয়ে যাব। আমি মনে করি, সুযোগ পেলে খুব বেশি হলে দুই বছরের ব্যবধানে আমি সঙ্গীতাঙ্গনের উন্নতির জন্য কিছু একটা করতে পারব।
অডিও অ্যালবামে না গাইলেও আমি কিন্তু গান ছাড়ছি না। বাণিজ্যের জন্য যে গান তৈরি হয় সেটা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলাম। তবে আমার রাজনৈতিক দলের জন্য নতুন গানে কণ্ঠ দেব। দেশের গানগুলোও গাইব।
অডিও শিল্প থেকে আমি অনেক পেয়েছি। দিয়েছিও অনেক। এই শিল্পের প্রতি আমার অঙ্গীকার থেকে বসুধা-আর্ব এন্টারটেইনমেন্ট চালু রাখব যতদিন বাঁচি।
আপনাদের সবাইকে ধন্যবাদ আমার সঙ্গে গত ১০ বছর ছিলেন। ভক্তদের ভালোবাসার কাছে আমি আজীবন ঋণী।...
জানা গেছে, সুরকার ইমন সাহা মাদ্রাজে কনকচাঁপা ও আসিফের জন্য একটি দ্বৈত অ্যালবামের সুর তৈরি করছেন। এছাড়া আসিফের একটি একক অ্যালবাম আর মুহিনকে নিয়ে একটি দ্বৈত অ্যালবাম তৈরি করা আছে। এর মধ্যে শুধু আসিফ ও মুহিনের দ্বৈত 'কতটা রাত একা' আগামী পয়লা বৈশাখে বসুধা-আর্ব এন্টারটেইনমেন্ট থেকে প্রকাশ হবে।
এদিকে অডিও অ্যালবাম থেকে আসিফের সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন কয়েকজন শিল্পী।
আজম খান : এটা তার ব্যক্তিগত ব্যাপার। তবে আমি মনে করি, যে কোনো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় অনেক ভেবেচিন্তে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত। তার অসংখ্য ভক্ত আছে, আর গানের সুবাদেই আসিফ এতদূর এসেছে। তাই এ বিষয়ে তার ভাবনা অন্য দশজনের চেয়ে আলাদা হবে। এখন অডিও শিল্পের বাজার মোটেই ভালো নয়, যদি সে কারণে আসিফ এমন সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে তাহলে এটা একান্তই তার ব্যাপার।
সৈয়দ আবদুল হাদী : অভিমান করে গান ছাড়ার সিদ্ধান্তকে আমি সঠিক বলে মনে করি না। অভিমান থেকে তো যুদ্ধ করার জেদও আসতে পারতো। কিংবা অন্য কিছু। আসিফের গানের গলা বেশ চমৎকার। ওর অনেক ভক্ত আছে। এছাড়াও সঙ্গীতাঙ্গনে ভালো একটি অবস্থান গড়ে নিয়েছে সে। সেখান থেকেও মানুষের জন্য কিছু করা যেতে পারে। আমি জানি, গানের মানুষ গান ছাড়া থাকতে পারে না। আসিফও পারবে না!
কুমার বিশ্বজিৎ : আমি বলব এটা আসিফের ভুল সিদ্ধান্ত। প্রতিটি শিল্পী গান গায় মানুষের জন্য। গান থেকে সরে দাঁড়ালেই কি সব সমস্যার সমাধান হয়ে যায়? গানের প্রতি, ভক্তদের প্রতি তার একটা দায়বদ্ধতা আছে। আর সেটা ভেবেই সব মেনে নিতে হয়। আমি চাই আসিফ আবার আগের মতো অডিও শিল্পের মানুষ হিসেবে ফিরে আসুক।
সামিনা চৌধুরী : গানের মাধ্যমেই যেহেতু আসিফ এসেছিল সঙ্গীতাঙ্গনে, মান অভিমান থাকতে পারে, তাই বলে গান ছেড়ে দিতে হবে? এটাকে আমি মনে করি ভুল সিদ্ধান্ত। গানের সঙ্গে অভিমান করে যদি গান ছেড়ে দিতে হয়, তাহলে আমি সেই ১৯৮২ সালেই গান ছেড়ে দিতাম। আমার মনে হয়, আসিফ একটি ভুল পথে পা বাড়াচ্ছে।
আসিফ, ভক্ত ও শিল্পীদের কথা হিসাব করে, একথা নিদ্বির্ধায় বলা যায়, অডিও শিল্প থেকে আসিফের সরে দাঁড়ানো অমিমাংসিত এক রহস্য হয়েই থাকল। তবে ভক্তদের অনুরোধ আর পরিবারের উৎসাহ হয়তো আবার অডিও শিল্পের গানে আসিফকে ফিরিয়ে আনতে পারে। এ প্রত্যাশা তার অসংখ্য ভক্তের। আবার তিনি পুরনো রূপে ফিরে আসবেন।

No comments:

Post a Comment

kazi-music