
মুফতি এনায়েতুলল্গাহ
অসুস্থ ও অতিবৃদ্ধ এবং অত্যধিক শারীরিক দুর্বলতার কারণে যাদের রোজা পালন কষ্টকর হয়; আর যারা সফরে থাকার কারণে রোজা পালন করতে পারেন না, তাদের জন্য ইসলামী শরিয়ত কাজা ও কাফফারার বিধান রেখেছে। এ প্রসঙ্গে কোরআনুল কারীমে ইরশাদ হয়েছে, 'তোমাদের মধ্যে কেউ পীড়িত হলে বা সফরে থাকলে অন্য সময় তা পূরণ করে নিতে হবে। এ (রোজা) যাদের অতিশয় কষ্ট দেয়, তাদের কর্তব্য হচ্ছে এর পরিবর্তে ফিদইয়া বা একজন মিসকিনকে অন্নদান করা। যদি কেউ স্বতঃস্ফূর্তভাবে সৎ কাজ করে, তবে সেটা তার পক্ষে অধিকতর কল্যাণকর। তোমাদের মধ্যে যারা এ মাস পাবে, তারা যেন এ মাসে সিয়াম পালন করে। আর কেউ পীড়িত থাকলে অথবা সফরে থাকলে অন্য সময় এ সংখ্যা পূরণ করবে। আলল্গাহ তোমাদের জন্য যেটা সহজ সেটাই চান এবং যা তোমাদের জন্য ক্লেশকর তা চান না এ জন্য যে, তোমরা সংখ্যা পূরণ করবে।' সূরা বাকারা : ১৮৪-১৮৫
যেসব কারণে রোজা ভঙ্গ করা যায়, তবে পরে কাজা করে নিতে হয়, তা হচ্ছে_ ১. মুসাফির অবস্থা, ২. রোগবৃদ্ধির আশঙ্কা, ৩. গর্ভের সন্তানের ক্ষতির সম্ভাবনা, ৪. প্রবল ক্ষুধা বা তৃষ্ণা অনুভূত হয়, যাতে মৃত্যুর আশঙ্কা সৃষ্টি হয়, ৫. শক্তিহীন বৃদ্ধ হলে, ৬. সাপে দংশন করলে, ৭. ঋতুবতী ও সদ্য প্রসূতি নারী হলে। আর যেসব কারণে রোজার কাজা ও কাফফারা দুটিই ওয়াজিব হয় তা হলো_ ইচ্ছাকৃতভাবে পানাহার, জেনেশুনে স্ত্রী সহবাস করলে রোজা ভেঙে যাবে। এ অবস্থায় কাজা ও কাফফারা দুটিই ওয়াজিব হয়।
মনে রাখা দরকার, শরিয়তে নিষেধ থাকা সত্ত্বেও বিনা কারণে রোজা ভঙ্গ করলে তার ওপর কাজা-কাফফারা উভয়ই আদায় করা ওয়াজিব। যে ক'টি রোজা ভঙ্গ হবে, সে ক'টি রোজা আদায় করতে হবে। কাজা রোজা একটির পরিবর্তে একটি। অর্থাৎ রোজার কাজা হিসেবে শুধু একটি রোজাই যথেষ্ট। কাফফারা আদায় করার তিনটি বিধান রয়েছে_ ১. একেকটি রোজা ভঙ্গের জন্য একাধারে ৬০টি রোজা রাখতে হবে। কাফফারা ধারাবাহিকভাবে ৬০টি রোজা রাখতে হবে, মাঝে কোনো একটি রোজা ভঙ্গ হলে আবার নতুন করে শুরু করতে হবে। ২. যদি কারও জন্য ৬০টি রোজা পালন সম্ভব না হয়, তাহলে সে ৬০ জন মিসকিনকে দুই বেলা খানা খাওয়াবে। অন্যদিকে অসুস্থতার কারণে কারও রোজা রাখার ক্ষমতা না থাকলে ৬০ জন ফকির, মিসকিন, গরিব বা অসহায়কে প্রতিদিন দুই বেলা করে পেটভরে খানা খাওয়াবে। ৩. মুসলিম দাস-দাসী মুক্ত করে দেওয়া। বর্তমানে যেহেতু দাসপ্রথা নেই, তাই এটা দিয়ে কাফফারা আদায় করার সুযোগও নেই।
পবিত্র রমজানে নেক আমলের ফজিলত যেমন বেশি, তেমনি এ মাসে গুনাহ করলে এর শাস্তিও বেশি। বিশেষ করে ইচ্ছাকৃত রোজা না রাখলে কঠিন শাস্তির কথা বলা হয়েছে। হজরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসূলুলল্গাহ (সাঃ) বলেছেন, 'যে ব্যক্তি কোনো শরিয়ত অনুমোদিত ওজর ছাড়া রমজানের একটি রোজাও ছেড়ে দেয়, সে ৯ লাখ বছর জাহান্নামের প্রজ্বলিত আগুনে জ্বলতে থাকবে।'
বিনা কারণে যে ব্যক্তি রমজানের মাত্র একটি রোজা না রাখে এবং পরে যদি ওই রোজার পরিবর্তে সারাবছরও রোজা রাখে, তবু সে ততটুকু সওয়াব পাবে না, যতটুকু রমজানে ওই একটি রোজার কারণে পেত।
daily shamokal
No comments:
Post a Comment