CRICKET LIVE STREAMING

Wednesday, August 11, 2010

রাজধানীর স্কুলে কোচিং নয়

এখন থেকে রাজধানীর বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শ্রেণীকক্ষে নিয়মিত পাঠদানের বাইরে শিক্ষকেরা কোচিং করাতে পারবেন না। তবে ভালো ফল করা বা পিছিয়ে পড়া ছাত্রছাত্রীদের বিশেষ প্রয়োজনে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অতিরিক্ত ক্লাস নেওয়ার আয়োজন করতে পারবে।
সে ক্ষেত্রে প্রতি বিষয়ে এক ঘণ্টার একটি অতিরিক্ত ক্লাসের জন্য সংশ্লিষ্ট শিক্ষক সম্মানী পাবেন ১৭৫ টাকা। তবে কোনো শিক্ষার্থীকে অতিরিক্ত ক্লাস করতে বাধ্য করা যাবে না। এ ধরনের ক্লাস নিতে হবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নির্দিষ্ট ক্লাসের আগে বা পরে। অভিভাবক আবেদন করলে একজন শিক্ষার্থীকে এ ধরনের ক্লাসে অন্তর্ভুক্ত করা যাবে।
পঞ্চম শ্রেণীর প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী এবং অষ্টম শ্রেণীর জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষা সামনে রেখে রাজধানীর বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শ্রেণীকক্ষে কোচিং শুরু করেছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে বিভিন্ন অভিযোগের বিষয়ে গতকাল মঙ্গলবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ প্রথম আলোকে বলেন, রাজধানীর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে কোচিং বিষয়ে বিভিন্ন প্রশ্ন ওঠায় এই সভার আয়োজন করা হয়। এ সময় সামগ্রিক বিষয় পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত হয়েছে, শিক্ষা মন্ত্রণালয় কোচিংয়ের পক্ষে অবস্থান নিতে পারে না। তবে শিক্ষার্থীদের প্রয়োজনে নির্দিষ্ট সম্মানীর বিনিময়ে অতিরিক্ত ক্লাস নেওয়া যাবে। প্রথম পর্যায়ে রাজধানীর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে এ সিদ্ধান্ত প্রযোজ্য হবে। পর্যায়ক্রমে সারা দেশ থেকে মতামত নিয়ে এ বিষয়টি চূড়ান্ত করে প্রজ্ঞাপন জারি হবে।
জানা যায়, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একটি প্রকল্পের অধীনে দেশের সাড়ে চার হাজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এসএসসি পরীক্ষার্থীদের জন্য গণিত ও ইংরেজির অতিরিক্ত ক্লাস নেওয়া হয়। এক ঘণ্টার একটি অতিরিক্ত ক্লাসের জন্য সংশ্লিষ্ট শিক্ষক ১৭৫ টাকা সম্মানী পান। ওই প্রকল্পের দৃষ্টান্ত অনুসরণ করে শিক্ষা মন্ত্রণালয় রাজধানীর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে অতিরিক্ত ক্লাস নেওয়ার পক্ষে মত দিয়েছে।
গতকালের বৈঠকে শিক্ষা কর্মকর্তারা রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কোচিং-বাণিজ্যের বিষয়টি তুলে ধরেন। এ সময় শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ভালো ফল করতে বা পিছিয়ে পড়া ছাত্রছাত্রীদের কথা চিন্তা করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অতিরিক্ত ক্লাস নেওয়া যায়। কিন্তু এ বিষয়ে অবশ্যই একটি নীতিমালা থাকা উচিত।
সূত্র জানায়, মন্ত্রণালয়ের নেওয়া সিদ্ধান্ত অনুযায়ী শিক্ষার্থীদের বিশেষ প্রয়োজনে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অতিরিক্ত ক্লাস নিতে পারবে, কিন্তু প্রচলিত কোচিংয়ের নামে ইচ্ছামতো টাকা আদায় করতে পারবে না। বেসরকারি স্কুলের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত ক্লাস নেওয়ার বিষয়ে অভিভাবক ও শিক্ষকেরা বসে আলোচনা সাপেক্ষে সিদ্ধান্ত নেবেন। এ ছাড়া এ বিষয়ে বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটি সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়তা করবে। সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অতিরিক্ত ক্লাস নেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে স্টাফ কাউন্সিল।
অতিরিক্ত ক্লাস নেওয়ার বিনিময়ে সম্মানী নির্ধারণ প্রসঙ্গে শিক্ষাবিদ সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘সমাপনী ও জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষা ঘিরে এমন বাণিজ্য শুরু হয়ে যাবে, এটা ভাবতে পারিনি।’ তিনি এক ঘণ্টা অতিরিক্ত ক্লাসের জন্য ১৭৫ টাকা নির্ধারণের বিষয়টি যৌক্তিক মনে করেন। তবে এই টাকা সরকারের পক্ষ থেকে শিক্ষকদের সরাসরি দেওয়ার প্রস্তাব করেন তিনি। সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম বলেন, ছয়-সাত ঘণ্টা শ্রেণীকক্ষে পড়ার পর শিক্ষার্থী প্রস্তুত হবে না, এ জন্য অতিরিক্ত ক্লাস লাগবে। এর দায়দায়িত্ব শিক্ষার্থী বা অভিভাবকের নয়। তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের শিক্ষকদের বেতন কম। তাই তাঁদের বেতন বাড়িয়ে বা সম্মানী দিয়ে বলা যেতে পারে, তাঁরা নিজ বাসায় বা কোচিং সেন্টারে গিয়ে পড়াতে পারবেন না।’
গতকালের সভায় শিক্ষাসচিব সৈয়দ আতাউর রহমান, মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব (মাধ্যমিক) খন্দকার রাকিবুর রহমান, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক নোমান উর রশীদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
জানা যায়, আশির দশক থেকে প্রাইভেট টিউশনি ও কোচিং-ব্যবস্থার শুরু। রাজধানীসহ সারা দেশে এখন অমুক স্যার, তমুক ম্যাডামদের ছড়াছড়ি। অথচ ‘দি রিকগনাইজড নন-গভর্নমেন্ট সেকেন্ডারি স্কুল টিচার্স (বোর্ড অব ইন্টারমিডিয়েট অ্যান্ড সেকেন্ডারি এডুকেশন, ঢাকা) টার্মস অ্যান্ড কন্ডিশনস অব সার্ভিস রেগুলেশনস, ১৯৭৯ অনুযায়ী প্রাইভেট টিউশনি নিষিদ্ধ। ওই আইনে বলা হয়েছে, ‘কোনো পূর্ণকালীন শিক্ষক স্বাভাবিক কাজের বাইরে নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষের পূর্ব অনুমোদন ব্যতিরেকে কোনো ব্যক্তিগত টিউশনি বা অন্য কোনো নিয়োগ লাভ বা অন্য কোথাও ভাতাসহ বা ভাতা ব্যতীত নিজেকে নিয়োজিত করতে পারবেন না।’
২০০৮ সালের ৪ মার্চ মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের এক চিঠিতে ওই আইনের প্রয়োগ ও বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাদের অনুরোধ করা হয়েছিল।
এদিকে কোচিং ও প্রাইভেট পড়া অনেকটা বাধ্যতামূলক হওয়ায় অভিভাবকের ওপর বাড়তি চাপ পড়ছে। গণসাক্ষরতা অভিযানের গবেষণায় (বাংলাদেশের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষার ব্যয় সংকুলান, এডুকেশন ওয়াচ প্রতিবেদন, প্রকাশ: ২৭ ডিসেম্বর ২০০৭) বলা হয়েছে, শিক্ষা-ব্যয়ের বড় অংশ পারিবারিকভাবে মেটানো হয়। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও সরকারি সহায়তাপ্রাপ্ত মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের শিক্ষা-ব্যয়ের ৫৯ ও ৭১ শতাংশ পরিবার বহন করে। এর মধ্যে বড় খাত প্রাইভেট টিউশনি ও কোচিং। collected from dainik protho alo

No comments:

Post a Comment

kazi-music