CRICKET LIVE STREAMING

Tuesday, June 7, 2011

বহির্বিশ্বে বাংলাদেশ সম্পর্কে নিয়মিত প্রচারণার পরামর্শ -বিপণন-গুরু ফিলিপ কটলার

গণমাধ্যম প্রতিনিধিদের উদ্দেশে বক্তব্য দেন ফিলিপ কটলার


পৃথিবীর সব মানুষের বাংলাদেশকে চেনার ও জানার প্রয়োজন নেই। বিশ্বের ৬০০ কোটির বেশি লোক বাংলাদেশকে জানবে, এমনটা ভাবাও ঠিক নয়।
বরং এমন কিছু লোকের কাছে বাংলাদেশের পরিচিতি থাকতে হবে, যাদের প্রচুর টাকা আছে। তাদের কেউ এ দেশে বেড়াতে আসবে, কেউ আসবে বিনিয়োগ ও ব্যবসা করতে। আর এসব লোকের কাছে বাংলাদেশকে তুলে ধরার জন্য নিয়মিত ভালো প্রচারণা চালাতে হবে।
বিপণন শাস্ত্রের গুরু হিসেবে খ্যাত ফিলিপ কটলার এভাবেই বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের পরিচিতি তুলে ধরার পরামর্শ দিলেন। তিনি গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে ঢাকায় আসেন। বিকেলে রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁওয়ে গণমাধ্যম প্রতিনিধিদের মুখোমুখি হন। সেখানেই উঠে আসে তাঁর এ পরামর্শ।
ফিলিপ কটলার আরও বলেন, ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আমি যদি লোকজনকে বাংলাদেশ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করি, তাহলে অনেকেই বিস্মিত হবে, আমি কী বলছি। কেননা, তারা অজ্ঞ। কিছু লোক হয়তো বলবে, এটা এশিয়ার কোনো দেশ। আর কিছু লোক বলবে, মুসলিম দেশ। কেউ কেউ এমনও বলতে পারে, এটা পাকিস্তানের সঙ্গে যুক্ত। সুতরাং বুঝতে হবে, সবাই বাংলাদেশকে জানে না। তা জানারও দরকার নেই।’
ফিলিপ কটলার বলেন, ‘বাংলাদেশে প্রচুর মানুষ গরিব। কাজেই তাদের কথা চিন্তা করে সস্তা পণ্য ও সেবা প্রস্তুত করতে হবে। কেননা, আমরা চাই না, কেউ গরিব থাকুক। ভারত কিন্তু তাদের বিপুল গরিব জনগোষ্ঠীর কথা চিন্তা করে এভাবেই পণ্য প্রস্তুত ও বিপণন করছে।’
কটলার এ প্রসঙ্গে তাঁর সামাজিক বিপণনের ধারণাটি উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, সামাজিক বিপণন দারিদ্র্য বিমোচনকে বিবেচনায় নিয়ে কাজ করে।
কটলার আরও বলেন, প্রায় ১৭ কোটি মানুষের এই দেশের ব্রিকস জোটে অন্তর্ভুক্ত হওয়া উচিত। ব্রিকস জোটে এখন আছে ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চীন ও দক্ষিণ আফ্রিকা। এসব দেশের অভিজ্ঞতা থেকে বাংলাদেশের শিক্ষা গ্রহণ করা উচিত বলেও মন্তব্য করেন তিনি। বাংলাদেশের পাশাপাশি ইন্দোনেশিয়াকেও তিনি এই জোটভুক্ত হওয়ার যোগ্য বলে মনে করেন। উল্লেখ্য, ব্রিকস হলো অগ্রসর উন্নয়নশীল দেশগুলোর একটি জোট।
কটলার বলেন, বাংলাদেশের বিষয়ে তাঁর আগ্রহের অন্যতম কারণ শান্তিতে নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ মুহাম্মদ ইউনূস। ঋণ ও টেলিফোনের মাধ্যমে তিনি গরিব মানুষকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সহায়তা করেছেন। এ জন্য ইউনূসকে ধন্যবাদ জানান কটলার।
বাংলাদেশের তৈরি পোশাক ও ওষুধশিল্পের বিকাশের প্রশংসা করেন কটলার। তিনি বলেন, কীভাবে একটি দেশ সামনে এগিয়ে যাবে, তা আগে সঠিকভাবে নির্ধারণ করতে হবে। সিঙ্গাপুরের উদাহরণ তুলে ধরে কটলার বলেন, সিঙ্গাপুর নিজেকে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও আর্থিক খাতের রাজধানী হিসেবে গড়ে তুলতে চেয়েছে। সেভাবেই তারা তাদের দেশকে বিপণন করেছে।
কটলার বলেন, বিপণন হলো ভক্ত বা অনুরাগী (ফ্যান) তৈরি করার জাদু। আর তাই কোনো প্রতিষ্ঠান হারিয়ে গেলে তার অভাব অনুভূত হওয়ার মধ্য দিয়েই প্রমাণিত হয়, সেটি বিপণন কার্যক্রমে সফল হয়েছিল।
মিডিয়া বা গণমাধ্যমে বিপণনের ওপর সামান্য আলোকপাত করেন কটলার। তিনি বলেন, এখন নিউ-মিডিয়া (ইন্টারনেট) বা সোশ্যাল মিডিয়ার (ফেসবুক, টুইটার) উন্মাদনা চলছে। তবে পণ্য ও সেবা বিপণনে শুধু এই নিউ-মিডিয়ার ওপর নির্ভর করলে চলবে না।
বাংলাদেশের ইলেকট্রনিক গণমাধ্যমে বিশেষত, টেলিভিশন চ্যানেলে বিজ্ঞাপনের জন্য দর্শকেরা যথেষ্ট বিরক্ত হয়। সে ক্ষেত্রে কী করণীয় জানতে চাইলে কটলার বলেন, শুধু টেলিভিশনেই নয়, ইন্টারনেটেও বিজ্ঞাপনের প্রসারে দর্শক-গ্রাহকেরা বিরক্ত। তবে বিজ্ঞাপন থাকবেই। আর দর্শক তা এড়াতে চাইবেই।
কটলার আরও বলেন, বিজ্ঞাপনের সৃজনশীলতা আনা ও উপস্থাপনের কুশলী হওয়া প্রয়োজন। এ জন্য গ্রাহকদের বিজ্ঞাপন বাছাইতে ভূমিকা রাখার সুযোগ প্রয়োজন।
গণমাধ্যমের সঙ্গে ফিলিপ কটলারের এ অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ মিজানুর রহমান এবং ব্র্যান্ড ফোরাম বাংলাদেশের উপদেষ্টা সৈয়দ ফরহাত আনোয়ার।
অনুষ্ঠানে মিজানুর রহমান বলেন, কটলার বিপণনকে ব্যবসার গণ্ডি ছাড়িয়ে সামাজিক খাতের পরিধিতে ছড়িয়ে দিয়েছেন।
ফিলিপ কটলার বর্তমানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নর্থ ওয়েস্টার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের জেএল কেলগ গ্র্যাজুয়েট স্কুল অব ম্যানেজমেন্টের ইন্টারন্যাশনাল মার্কেটিংয়ের এস সি জনসন ডিসটিংগুইশড প্রফেসর। তাঁর রচিত প্রিন্সিপলস অব মার্কেটিং বিশ্বের সব বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসা অধ্যয়নে ছাত্রছাত্রীদের অবশ্যপাঠ্য। বিপণন শাস্ত্রের ওপর তাঁর আরও কয়েকটি গ্রন্থ রয়েছে।
বাংলাদেশে এই প্রথমবারের মতো ফিলিপ কটলার এলেন। বাংলাদেশ ব্র্যান্ড ফোরাম তাঁকে নিয়ে এসেছে। আগামীকাল তিনি একটি দিনব্যাপী সার্টিফাইড প্রফেশনাল মাস্টার্স ক্লাস পরিচালনা করবেন। সফরকালে ফিলিপ কটলার সরকারি শীর্ষ কর্মকর্তা ও ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গেও সাক্ষাৎ করবেন।

No comments:

Post a Comment

kazi-music