CRICKET LIVE STREAMING

Sunday, September 19, 2010

কিংবদন্তি : ববিতা


ববিতা এক সময় ছিলেন নায়িকা। বিয়েও করেছিলেন, সুখী হতে পারেননি বলেই স্বামীর সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেছিলেন। তার সেই স্বামী ইফতেখার বহু বছর হয় মারা গেছেন। একমাত্র পুত্রসন্তানকে নিয়ে তার এখনকার জীবন কেটে যাচ্ছে। পাশাপাশি বিভিন্ন ছবিতে তিনি মায়ের ভূমিকায় এক সময় ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন। সেই অবস্থাও এখন আর নেই। হাতে ছবির সংখ্যা খুবই কম। প্রযোজিকাও ছিলেন তিনি। ‘পোকামাকড়ের ঘরবসতি’ বানিয়ে তিনি এমন লোকসান দিলেন যে, যার জন্য পরবর্তী সময়ে ছবি নির্মাণে আর আগ্রহ দেখালেন না। তবে ববিতা নায়িকা হিসেবে সফল হয়েছিলেন। ১৯৬৮ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত শীর্ষ নায়িকাদের একজন ছিলেন তিনি। সত্যজিত্ রায়ের ‘অশনি সঙ্কেত’ ছবিতে অভিনয় করে আন্তর্জাতিকভাবে প্রশংসিত হন। একাধিকবার তিনি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন, যে জন্য এই ববিতাও কিন্তু জীবদ্দশায় কিংবদন্তি হয়ে থাকলেন।
ববিতার ফিল্মি জীবনের বয়স প্রায় ৪২ বছর পেরিয়ে গেছে। ১৯৬৮ সাল থেকে তার অভিনয় শুরু ‘সংসার’ ছবি থেকে। ‘সংসার’-এ যে মেয়েটি বুকভরা আশা নিয়ে ফিল্মে এসেছিলেন, সেই ববিতা প্রথমে কি আশা করেছিলেন ফিল্মে সফল হবেন? অক্লান্ত চেষ্টা আর প্রতিভাময়ী হওয়াতে ববিতা ফিল্মে একটা যুগ সৃষ্টি করে গেছেন। ববিতার আসল নাম ফরিদা আখতার। ডাকনাম ‘পপি’। জন্ম ১৯৫৩ সালের ৩০ জুলাই বাগেরহাটে।
পৈতৃক বাড়ি যশোরে। ১৯৬৮ সালে প্রথম চিত্র জগতে আসেন সিনে ওয়ার্কশপের ব্যানারে নির্মিত ‘সংসার’ ছবিতে। তখন ওর নাম ছিল ‘সুবর্ণা’। বড় বোন সুচন্দার স্বামী জহির রায়হানই তাকে চিত্র জগতে নিয়ে আসেন। জহির রায়হানের ‘জ্বলতে সুরুজ কি নিচে’ ছবিতে অভিনয় করতে গিয়ে সুবর্ণা হলেন ‘ববিতা’। নায়িকা হিসেবে ববিতার যথার্থ উত্থান ঘটে ১৯৬৯ সালে ‘শেষ পর্যন্ত’ ছবির মাধ্যমে।
১৯৭০ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত ববিতা শতাধিক ছবিতে নায়িকা হিসেবে অভিনয় করেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি ছবি হলো—পিচঢালা পথ (১৯৭০), স্বরলিপি (১৯৭০), অরুণোদয়ের অগ্নিসাক্ষী (১৯৭২), ধীরে বহে মেঘনা (১৯৭৩), আবার তোরা মানুষ হ (১৯৭৩), অশনি সঙ্কেত (১৯৭৩), বাঁদী থেকে বেগম (১৯৭৫), লাঠিয়াল (১৯৭৫), নয়নমণি (১৯৭৬), অনন্ত প্রেম (১৯৭৬), গোলাপী এখন ট্রেনে (১৯৭৮), সুন্দরী (১৯৭৯), এতিম (১৯৮০), দূর দেশ (১৯৮১), লাইলী মজনু (১৯৮৩), তিনকন্যা (১৯৮৫), রামের সুমতি (১৯৮৫), চণ্ডিদাস ও রজকিনী (১৯৮৭), বিরহব্যথা (১৯৮৯), বিরাজ বৌ (১৯৮৯) প্রভৃতি।
জাফর ইকবাল, ফারুক, উজ্জ্বল, রাজ্জাক, সোহেল রানা, বুলবুল আহমেদ, ওয়াসিম, জাভেদ প্রমুখ ছিলেন তার রোমান্টিক নায়ক। তবে জাফর ইকবালের সঙ্গে অভিনয় করতে গিয়ে ওদের মধ্যে বেশ সুসম্পর্ক গড়ায়। শোনা যায়, এরা একে অপরের প্রেমেও নাকি পড়েছিলেন। পর্দায় প্রেমের দৃশ্যে অভিনয় করতে করতে যদিও তারা সফল হন, কিন্তু বাস্তবে তা হতে পারেননি। জাফর-ববিতা জুটির উল্লেখযোগ্য ছবি হলো— ‘এক মুঠো ভাত’। এই ছবিটি অসম্ভব ব্যবসাসফল হওয়ার পেছনে অন্যতম কারণ ছিল ভারতীয় হিন্দি ছবি ‘রুটি’র কাহিনী নিয়ে নির্মাণের জন্যই। ছবিতে ববিতা ও জাফর ইকবাল বিভিন্ন রোমান্টিক দৃশ্যে অংশ নেন। ‘অতো রূপের গরব করিস না, রূপ চিরদিন থাকবে না ... আমি অগ্নিশিখা তুই পতঙ্গ...’ গানের দৃশ্যে ওদের উপস্থিতি সেদিন (১৯৭৬ সালে) সর্বশ্রেণীর দর্শককে মুগ্ধ করেছিল।
‘শনিবারের চিঠি’ ছবিতে উজ্জ্বল-ববিতা জুটি সফল হয়েছিল। ফারুকের সঙ্গে ববিতার জুটি বাঁধার কাহিনীও মনে রাখার মতো। এই জুটির ‘নয়নমণি’ (১৯৭৬) ছবিটি ব্যবসাসফল হয়েছিল। পোশাকি ছবিতেও ববিতার উপস্থিতি ছিল। তার অভিনীত পোশাকি ছবির মধ্যে কয়েকটি হলো— নওজোয়ান, রাজবন্দি, চম্পা চামেলী, জংলী রানী, বাগদাদের চোর, শরীফ বদমাস, নিশান, তাজ ও তলোয়ার প্রভৃতি। ‘নিশান’-এ তার নায়ক ছিলেন জাভেদ।
ববিতার সঙ্গে কয়েকবারই দেখা হয়েছে। কয়েক বছর আগে তিনি জানিয়েছিলেন, বরাবর আমি সুস্থ সুন্দর জীবন চেয়েছি। আল্লাহ তায়ালা আমাকে যথেষ্ট দিয়েছেন। অন্যান্য অভিনেত্রীর থেকে আমার জীবনটা একটু ভিন্ন, একটু আলাদা। সমাজের রুচিশীল মানুষের মতোই আমার জীবন। ভবিষ্যতে একাকীই থাকব—এটাই আমার চিরদিনের ইচ্ছে।
ববিতা আরও জানিয়েছিলেন, ১৯৭০ থেকে ১৯৮৯ পর্যন্ত গল্পের জন্য ছবিঘরে দর্শকের ভিড় হতো। আমি ভাগ্যবতী, কেননা যখন ফিল্মে নায়িকা ছিলাম তখন সর্বশ্রেণীর দর্শক ছবিঘরে আসত। আমার যুগে অভিনয় দেখানোর যথেষ্ট স্কোপ ছিল। সে জন্য আমার অভিনীত ছবির প্রশংসা এখনও শুনতে পাই। তখন গর্বে আনন্দে বুকটা যে ভরে যায়।

No comments:

Post a Comment

kazi-music