CRICKET LIVE STREAMING

Wednesday, August 25, 2010

বিউটি কুইন শাবানা -কিংবদন্তি


ঢাকার ছবিতে প্রায় ৩০ বছর ধরে শাবানা ছিলেন জনপ্রিয় নায়িকা। শাবানা নাম শুনতেই দর্শক উন্মনা হয়ে উঠত। যদি শুনত ছবিঘরে শাবানার ছবি চলছে, দর্শক হুমড়ি খেয়ে ছুটে যেত শুধুই তার ছবি দেখার জন্য। শাবানার নামেই ১৯৬৬ থেকে ১৯৯০ পর্যন্ত ছবি চলত। দেশজুড়ে তার ছিল লাখ লাখ ভক্ত। সেই শাবানা প্রায় ১৫ বছর ধরে ছবির জগত থেকে বিদায় নিয়েও সেদিন-এদিনের দর্শকের মনে এখনও রেখাপাত করে আছেন। শাবানা যখন নায়িকা ছিলেন তখন সবশ্রেণীর লোকজন ছবি দেখত। কী ছাত্র, কী চাকরিজীবী, ব্যবসায়ী, ঠিকাদার, গৃহিণী, শিক্ষক, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার সব পেশার লোকজন তার ছবি দেখার জন্য ছবিঘরে ভিড় করত। আর এ জন্যই শাবানা জীবদ্দশায় হয়েছেন কিংবদন্তির নায়িকা।
সেই শাবানা এখন থাকেন আমেরিকার নিউইয়র্কে। ছেলেমেয়ে বিয়ে দিয়ে তিনি আজ অবসর জীবন কাটাচ্ছেন। সিনেমার সেই গৌরবময় দিনগুলো তাকে আজও পিছু টানে।
গেল বছর শাবানা ঢাকায় এসেছিলেন। তখন তিনি জানিয়েছিলেন, কত স্মৃতি মুছে গেছে, কত স্মৃতি চাপা পড়ে গেছে। কত ঘটনা আমাকে ভেঙেছে, গড়েছে; তবুও এক সময় মনে হয়, সব কিছুই কি ভুলে গেছি? সব স্মৃতি ভুলে থাকা, সে তো নয় ভোলা। পুরনো দিনগুলোয় ফিরে গিয়ে শাবানা বারবার কেমন যেন হয়ে গিয়েছিলেন। ১৯৬১ সালে ‘নতুন সুর’ ছবিতে প্রথম শিশু শিল্পী হিসেবে অভিনয় শুরু করি। যদিও ছবিটা রিলিজ হয়েছিল ১৯৬২ সালে। তখন আমার বয়স ১১ কি ১২ বছর। বাবার উত্সাহে ফিল্মে এসেছিলাম। বাবা আমাকে নিয়ে যেতেন শুটিংয়ে। এহতেশাম চাচাই আমাকে প্রথম অভিনয়ের সুযোগ দিলেন। আবার এহতেশাম চাচার উর্দু ছবি চকোরিতে প্রথম নায়িকা হয়েও এসেছিলাম। এ ছবি থেকেই রত্না থেকে হয়ে গেলাম শাবানা।
শাবানার পৈতৃক বাড়ি চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলার ডাবুয়া গ্রামে। তার বাবা ফয়েজ চৌধুরী এক সময় চিত্র পরিচালক ছিলেন। এরও আগে তার আর্থিক অবস্থা ভালো না থাকায় মেয়েকে ফিল্মে দিয়ে এবং নিজে চলচ্চিত্রে জড়িয়ে ভাগ্য গড়ার চেষ্টা চালাতে থাকেন। একদিন তার সে আশা পূরণ হয়েছিল। শাবানা তখন রত্না নামে ‘নতুন সুর’ ছবিতে অভিনয়ের পরে তালাশ, সাগর, ভাইয়াসহ আরও কয়েকটি ছবিতে অভিনয় করলেন।
১৯৬৬ সাল থেকে তার উত্থান ঘটতে শুরু হয়। সে বছরই ‘আবার বনবাসে রূপবান’-এ সুলতানা জামানের কন্যা সোনাভানের চরিত্রে অভিনয় করে নায়িকা হিসেবে রত্না প্রথম দর্শকের মন কাড়লেন। এরপর ‘জংলী মেয়ে’ এবং ‘চকোরি’ ছবি দুটিতে প্রধান নায়িকার ভূমিকায় অভিনয় করার পর শাবানাকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। শাবানা তার অভিনয়ের প্রথম দিককার সম্পর্কে একবার বলেছিলেন, ১৯৬৭ সালে ‘চকোরি’ রিলিজের পর থেকে আমার খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ল ঢাকার বাইরে লাহোর ও করাচিতে। ১৯৬৮ সালে নায়িকা হিসেচে চাঁদ আওর চাঁদনী, ভাগ্যচক্র এবং কুলীতে; ১৯৬৯ সালে-দাগ, মুক্তি; ১৯৭০ সালে ‘পায়েল, সমাপ্তি, ছদ্মবেশী, বাবুল, মধু মিলন ও একই অঙ্গে এত রূপ’-এ অভিনয় করলাম। রাজ্জাক-সুচন্দা জুটির অসম্ভব জনপ্রিয়তার সময় কাজী জহিরের ‘মধুমিলন’-এ অভিনয় দেখে দর্শক প্রশংসা শুরু করল আমাকে নিয়ে। দ্বৈত অনুরাগের সংঘাত ও পরিণতির ওপর ভিত্তি করে নির্মিত এ ছবি দর্শকের মাঝে ব্যাপক আলোড়ন তোলে। আমার তো মনে হয়, ‘মধু মিলন’ ছবিতে সম্ভবত প্রথম হৃদয়স্পর্শী অভিনয় দেখাতে সক্ষম হয়েছিলাম।
স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সাল থেকে আবার ছবি নির্মাণের হিড়িক পড়ে গেল। শাবানা আগের জনপ্রিয়তা নিয়ে ১৯৭২ সালেই ৮টি ছবির নায়িকা ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক ছবি ‘ওরা এগারো জন’ আর কাজী জহিরের ‘অবুঝ মন’ করে সারা বাংলাদেশে জানান দিলেন ঢাকার ফিল্মে শাবানার যে তুলনা হয় না। অন্যান্য ছবি যেমন—সমাধান, ছন্দ হারিয়ে গেল, এরাও মানুষ, মুন্না আওর বিজলী, চৌধুরী বাড়ি আর স্বীকৃতিও সফল হয়েছিল।
সামাজিক ছবির পাশাপাশি পোশাকি ছবি নির্মিত হতে থাকলে সেখানেও শাবানা ছিলেন সবার আগে। যেমন—দুই রাজকুমার, রাজরানী, রাজ দুলারী, শাহাজাদা, মালকা বানু, বানজারান প্রভৃতি করেও কম খ্যাতি পাননি। এদিকে ফকির মজনু শাহ, চাষীর মেয়ে, উত্সর্গ, মায়ার বাঁধন, আগুন, সোহাগ, মাটির ঘর, বধূ বিদায়, দুই পয়সার আলতা, লালু ভুলু, ভাত দে, লাল কাজল প্রভৃতি তাকে একজন সত্যিকার অভিনেত্রীর মর্যাদার স্বীকৃতি এনে দিয়েছিল।
প্রথমদিকে শাবানা নাদিম, আজিম, কাশেম, রাজ্জাক এবং পরবর্তী সময়ে ওয়াসিম, আলমগীর, জাভেদ প্রমুখের রোমান্টিক নায়িকা ছিলেন। তার অভিনীত স্মরণীয় ২০টি ছবি হলো—১. চকোরি (১৯৬৬), ২. পায়েল (১৯৬৯), ৩. ওরা এগারোজন (১৯৭২), ৪. অবুঝ মন (১৯৭২), ৫. দস্যুরানী (১৯৭৩), ৬. মালকা বানু (১৯৭৪), ৭. দুই রাজ কুমারী (১৯৭৫), ৮. অনেক প্রেম অনেক জ্বালা (১৯৭৫), ৯. আঁধার পেরিয়ে (১৯৭৫), ১০. জীবন সাথী (১৯৭৬), ১১. কাপুরুষ (১৯৭৮), ১২. আয়না (১৯৭৯), ১৩. চোখের মনি (১৯৭৯), ১৪. বিজয়িনী সোনাভান (১৯৭৯), ১৫. সাথী তুমি কার (১৯৮০), ১৬. দুই পয়সার আলতা (১৯৮২), ১৭. মরণের পরে (১৯৮৯), ১৮. কাজের বেটি রহিমা (১৯৯১), ১৯. স্বামীর আদেশ (১৯৯১) এবং ২০. অন্ধ বিশ্বাস (১৯৯২)—এসব ছবির কথা এখনও সেদিনের দর্শকরা মনে রেখেছে।

No comments:

Post a Comment

kazi-music