CRICKET LIVE STREAMING

Friday, September 9, 2011

 গরিবেরা থাকবে কোথায়?

নিম্নবিত্তদের আবাসনের ব্যবস্থা না করলে ভবিষ্যতে রাজধানীর পক্ষে টিকে থাকা সম্ভব নয়

নিম্নবিত্তদের আবাসনের ব্যবস্থা না করলে ভবিষ্যতে রাজধানীর পক্ষে টিকে থাকা সম্ভব নয়

সৌজন্যে: ফিলিপ ব্যালেস্ট্রা

ঢাকা শহরের আবাসন দুই রকম—পরিকল্পিত ও অপরিকল্পিত। সরকারি জমিতে অবৈধ স্থাপনা, আর বেসরকারি জমিতে বস্তি, নিম্ন ও নিম্ন-মধ্যবিত্ত আবাসিক এলাকার অনেক অংশই পড়ে যায় অপরিকল্পিত আবাসনের আওতায়। সবচেয়ে করুণ বাস্তবতা হলো ঢাকার নিম্নবিত্ত গরিব মানুষের আবাসন-ব্যবস্থা চরম অস্বাস্থ্যকর ও অপরিকল্পিত। এসব বাদ দিলে শহরে বাদবাকি সরকারি, আধা-সরকারি ও বেসরকারি জমিতে মধ্যবিত্ত, উচ্চ-মধ্যবিত্ত ও বিত্তবানদের সব আবাসন এলাকাই পরিকল্পিত; অর্থাৎ যাকে আমরা পরিকল্পিত আবাসন বলে থাকি, যেখানে বাড়িঘরের সঙ্গেই আছে পয়ঃপ্রণালি, রাস্তাঘাট, বর্জ্য-ব্যবস্থাপনা, শিক্ষায়তন, স্বাস্থ্যসেবা, পার্ক, হাঁটার জায়গা, হাটবাজার ইত্যাদি।
পরিসংখ্যান বলছে, ঢাকার প্রায় ৫০ শতাংশ লোকের বাস নাগরিক সুবিধাবঞ্চিত এলাকায়। এই অর্ধেক মানুষ থাকে কীভাবে? সরকার না করলেও নিজেদের ব্যবস্থা তারা নিজেরা করে নেয়। কোনো পরিকল্পনা বা অনুমোদন ছাড়াই গড়ে উঠছে এবং বিস্তৃত হয়ে চলেছে ঢাকা। এর বাসিন্দারা নাগরিক সুবিধাগুলোর কিছু পাচ্ছে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে, কিছু অপ্রাতিষ্ঠানিকভাবে। অপ্রাতিষ্ঠানিকভাবে গড়ে ওঠা আবাসন-ব্যবস্থাকে এখনো চাইলে সুষ্ঠু ও পরিকল্পিত কাঠামোর মধ্যে নিয়ে আসা সম্ভব। তা না হলে রাজধানী ঢাকা অচিরেই মানুষের বসবাসের অযোগ্য হয়ে উঠবে। বড় কোনো দুর্যোগ হলে জানমালের ক্ষতিও হবে অপরিসীম।
এর একটি সমাধান হচ্ছে, ঢাকা শহরকে ১০টি জোন বা অঞ্চলে বিকেন্দ্রিত করে পরিচালনা করতে হবে। তার জন্য রাজউক ও ডিসিসিকে স্থানীয়ভাবে শক্তিশালী করার উদ্যোগ নিতে হবে। ঢাকার জোন ও ওয়ার্ডভিত্তিক পরিকল্পিত পরিচালনের সুষ্ঠু ব্যবস্থা গড়ে তোলা দরকার।
অপরিকল্পিত এলাকাগুলো সূক্ষ্মভাবে ধরে ধরে পরিকল্পনার আওতায় আনতে হবে। এর জন্য দরকার ধৈর্য ও দীক্ষিত লোকবল। এ কাজ করতে গিয়ে শুধু উচ্ছেদ করলে চলবে না। উচ্ছেদের আগে পুনর্বাসন-ব্যবস্থা করতে হবে। করতে হবে নিম্নবিত্তদের জন্য পরিকল্পিত আবাসন। সবাইকে এ কথা বুঝতে হবে যে শ্রমজীবীরা এ শহরের পরিচালন ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সঙ্গে জড়িত। বস্ত্রশ্রমিক থেকে পরিবহন-শ্রমিক, নির্মাণশ্রমিক থেকে গৃহশ্রমিকেরাও এতে ইতিবাচকভাবে অবদান রাখছে। আবাসনসহ সব নাগরিক সুবিধা তাদের নাগরিক ও গণতান্ত্রিক অধিকার। নিম্ন-আয়ের মানুষের জন্য সহজ শর্তে পরিকল্পিত আবাসনের সুযোগ করে দিয়ে ঝুপড়ি বস্তি ইত্যাদির অবসান ঘটানো সম্ভব।
বাংলাদেশের সামগ্রিক ভৌত পরিকল্পনায় নগরায়ণ ও নগর বিন্যাসের ব্যাপারে খুব সুচিন্তিত সমাধান দরকার। জমির স্বল্পতা ও বিস্ফোরিত জনসংখ্যার সমস্যা সমাধানে বড় শহর বিকেন্দ্রীকরণ এবং মাঝারি ও বড় শহরে দ্রুত আঞ্চলিক বিন্যাস পরিকল্পনার পদক্ষেপ নিতে হবে। এতে ভবিষ্যতে পরিবেশ ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলার প্রস্তুতির কাজও অনেকটা এগিয়ে যাবে। সবার তাই অপ্রাতিষ্ঠানিকভাবে গড়ে ওঠা আবাসন এলাকার নাগরিক সুবিধাদির ব্যবস্থাপনার ব্যাপারে ভাবনা ও ধারণা পরিবর্তন করা দরকার। একই সঙ্গে দরকার সমাজের সব স্তরের মানুষকে নাগরিক সুবিধার আওতায় নিয়ে আসা, যাতে ঢাকা শহর হয়ে উঠতে পারে সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত একটি প্রকৃত মহানগর বা মেগাসিটি।

sas2609@gmail.com
সালমা এ শফি: নগর পরিকল্পনাকারী; গবেষক, সেন্টার ফর আরবান স্টাডিজ।

No comments:

Post a Comment

kazi-music