CRICKET LIVE STREAMING

Monday, August 1, 2011

রোজার গুরুত্বপূর্ণ বিধিবিধান

রোজার গুরুত্বপূর্ণ বিধিবিধান
মুহাম্মদ তৈয়্যেব হোসাইন
রোজার নিয়তের সময় : সুবহে সাদিকের আগেই নিয়ত করে নেয়া উত্তম। যদি সুবহে সাদিকের আগে নিয়ত না করে থাকে তবে সূর্য ঢলে যাওয়ার অর্থাত্ দুপুরের আগ পর্যন্ত নিয়ত করা যাবে। এরপর নিয়তের গ্রহণযোগ্যতা শেষ হয়ে যায়। সুনির্দিষ্ট দিবসের মানতকৃত রোজার নিয়তও অর্ধদিবস তথা সূর্য ঢলে যাওয়ার আগ পর্যন্ত করা যায়। তবে কাজা, কাফফারা এবং অনির্দিষ্ট দিবসের মানতের রোজার নিয়ত সুবহে সাদিকের আগেই করে নিতে হবে। কাফফারা ও অনির্দিষ্ট দিবসের মানতের রোজার নিয়ত সুবহে সাদিকের পর গ্রহণযোগ্য নয়।
সুনির্দিষ্ট দিবসের রোজার মানত হচ্ছে এই যে, কেউ এই বলে মানত করল যে, আমার অমুক কাজটি যদি হয়ে যায় তবে আমি শুক্রবার রোজা রাখব। এখন এই জুমার দিনের রোজা মানতকারীর জন্য সুনির্দিষ্ট দিবসের মানতের রোজা হিসেবে পরিগণিত হবে। আর অনির্দিষ্ট দিবসের রোজার মানত হচ্ছে নিম্নরূপ। কেউ এই বলে মানত করল যে, আমার অমুক কাজটি যদি হয়ে যায় তবে আমি একটি রোজা রাখব। তাকে নজরে গাইরে মুয়াইয়ান ‘অনির্দিষ্ট মান্নত’ বলা হয়।
যেসব কারণে রোজা ভাঙা যায় : রোজা রাখার কারণে অসুস্থ ব্যক্তির অসুখ বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকলে অথবা সুস্থ হতে বিলম্ব হওয়ার প্রবল সম্ভাবনা থাকলে, মুসাফির সফররত অবস্থায় থাকলে, অতিশয় বার্ধক্যের কারণে দুর্বল হয়ে গেলে, গর্ভবতীর গর্ভের সন্তানের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা থাকলে, দুগ্ধদানকারী মা’র দুধ শুকিয়ে যাওয়ার প্রবল সম্ভাবনা জাগলে তারা রোজা ভাঙতে পারবেন এবং এ ধরনের ব্যক্তিদের জন্য রোজা না রাখার অনুমতিও শরিয়ত প্রদান করে।
রোজাবস্থায় বমি হলে : অনিচ্ছাকৃত বমি হলে রোজার ক্ষতি হবে না, তবে ইচ্ছাকৃতভাবে মুখভরে বমি করলে রোজা ভেঙে যাবে।
সন্দেহ বা সংশয় দিবসে রোজা : যদি ৩০ শাবান এবং ১ রমজানের মধ্যে সন্দেহ হয় অর্থাত্ শাবানের ২৯তম রাতে চন্দ্র উদিত হওয়ার স্থান মেঘাচ্ছন্ন অথবা কুয়াশার কারণে আকাশ যদি পরিষ্কার না থাকে এবং চাঁদ দেখা না যায়, সেসঙ্গে শরিয়তে গ্রহণযোগ্য উপায়ে চাঁদ দেখার সংবাদও না আসে, তবে এই সন্দেহের দিন (৩০ শাবান) সাধারণ মানুষের জন্য রোজা রাখা উচিত নয়।
রোজা অবস্থায় স্ত্রীকে স্পর্শ ও চুম্বন প্রসঙ্গে : যদি শুধু স্ত্রীকে স্পর্শ বা চুম্বন করার কারণে বীর্যপাত হয়ে যায় তাহলে শুধু রোজার কাজা করতে হবে। আর যদি সহবাসের কারণে বীর্যপাত ঘটে তবে কাজা, কাফফারা উভয়ই বাধ্যতামূলক হবে।
রোজাবস্থায় গ্লুকোজ ইনজেকশন নেয়া : অত্যাবশ্যকীয় কারণে (ওজরবশত) গ্লুকোজ ইনজেকশন নিলে রোজা নষ্ট হবে না বটে; কিন্তু অত্যাবশ্যকীয় কারণ (ওজর) ছাড়া তা নেয়া মাকরুহ। তথাপি শক্তিবর্ধক ইনকেজশন প্রয়োজনে বা অপ্রয়োজনে ব্যবহার করার দ্বারা রোজা মাকরুহ হয়ে যায়।
রোজাদারের মুখ থেকে রক্ত বের হলে : রোজাদারের দাঁত ও মুখের অভ্যন্তরের জখম থেকে রক্ত নির্গত হয়ে যদি গলার অভ্যন্তরে প্রবেশ করে আরো গভীরে চলে যায় তবে রোজা ভেঙে যাবে, অন্যথায় ভাঙবে না।
রোজাবস্থায় টুথপেস্ট ব্যবহার করলে : রোজাবস্থায় টুথপেস্ট ব্যবহার করা মাকরুহ। যদি তা গলায় না পৌঁছে তবে রোজা ভাঙবে না।
রোজাদার রাত মনে করে ফজরের পর স্ত্রী সহবাস করলে : যদি রাত মনে করে স্ত্রী সহবাস করে ফেলে এবং পরে জানতে পারে যে, সুবহে সাদিক হয়ে গিয়েছিল তবে ওই ব্যক্তির রোজা নষ্ট হয়ে যাবে বটে, কিন্তু সেই রোজার শুধু কাজা করতে হবে, কাফফারা দিতে হবে না।
রোজাদার যদি পান, গুল মুখে নিয়ে ঘুমায় : ঘুমানোর আগে যদি মুখে পান বা গুল নিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে এবং সুবহে সাদিকের পর জাগ্রত হয়, তবে মুখে পান থাকুক আর না থাকুক রোজা ভেঙে যাবে। সেই রোজার কাজা করতে হবে, কাফফারা দিতে হবে না। আর রাতে ঘুমানোর আগে যদি পান খেয়ে তা ফেলে দেয়ার পরও পানের বা সুপারির ছোট ছোট টুকরো থেকে যায়, যদি তা কণা বা তার চেয়ে বড় হয়, তবে রোজা ভেঙে যাবে। অন্যথায় ভাঙবে না। কিন্তু পান খাওয়ার পর মুখে যে লাল রঙ থেকে যায় তার দ্বারা রোজা ক্ষতিগ্রস্ত হয় না। গুলের হুকুমও অনুরূপ।
এক দেশে রোজা রেখে অন্য দেশে ইফতার : রোজা রাখা এবং ইফতারের ক্ষেত্রে ব্যক্তি যেখানে উপস্থিত সেখানকার সময়ই ধর্তব্য। অতএব, কোনো ব্যক্তি যদি জেদ্দায় রোজা রেখে ইফতারের সময় ঢাকায় উপস্থিত থাকে, তবে সে ব্যক্তি ঢাকার সময় অনুযায়ী ইফতার করবে। অনুরূপভাবে কেউ ঢাকায় রোজা রেখে যদি জেদ্দা গমন করে তবে জেদ্দার হিসাব অনুযায়ী সে ব্যক্তি ইফতার করবে।
বিমানে যাত্রীদের ইফতার : আন্তর্জাতিক ফ্লাইটগুলো সাধারণত ৩৫ হাজার ফুট ওপর দিয়ে তীব্র গতিতে চলতে থাকে। ঘড়ির কাঁটা অনুযায়ী দেখা যায়, এ সময় স্থলভাগে সূর্য ডুবে গেছে। অথচ ফ্লাইট অনেক ওপর দিয়ে চলন্ত অবস্থায় সূর্য দৃষ্টিগোচর হতে থাকে। এমতাবস্থায় রোজাদার যেখানে উপস্থিত সেখানকার হিসাব অনুযায়ী ইফতার করবে। অতএব, যাত্রীরা যতক্ষণ পর্যন্ত সূর্য দেখবে, ততক্ষণ পর্যন্ত ইফতার করতে পারবে না। ভূমিতে সূর্য ডুবে গেলেও।

No comments:

Post a Comment

kazi-music